বছরজুড়ে অর্থনীতিতে যে ঝড় বয়ে গেছে, তার প্রভাব পড়েছে রপ্তানি আয়েও। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধ জুলাই-ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় এসেছে দুই হাজার ৭৫৪ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার।প্রবৃদ্ধি নেমেছে এক শতাংশের নিচে। আগের বছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১০ শতাংশের উপরে।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসের রপ্তানি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো।
দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমার কারণে মোট রপ্তানি কমেছে। জুলাই-ডিসেম্বরে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে দুই হাজার ৩৩৯ কোটি ১৩ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলারের। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। আগের বছর একই সময়ে তৈরি পোশাক থেকে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
বৈশ্বিক রপ্তানি কমার কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমেছে বলে মনে করছেন তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বাংলানিউজকে বলেন, রপ্তানি আয়ের পরিসংখ্যানে রপ্তানি আয় কমেছে বলে মনে হলেও বৈশ্বিক রপ্তানি যে হারে কমেছে, সে হিসাব করলে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেনি। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান প্রধান বাজারে রপ্তানি কমেছে। কিন্তু তৈরি পোশাকের নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির ফলে এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। তা না হলে আমাদের অবস্থা আরও খারাপ হতো। তৈরি পোশাক শিল্পের অবকাঠামো, ভিত্তি ও পণ্যের বহুমুখীকরণের কারণে আমরা টিকে গেছি। এই সময়টা টিকে থাকাই ছিল চ্যালেঞ্জ।
বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল আরও বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান রপ্তানি বাজার হলো ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এসব দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। কমেছে ক্রয়ক্ষমতা। মানুষ এখন তৈরি পোশাক কম কিনছে। যে কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সব দেশের রপ্তানি কমেছে। এ কারণে এসব প্রধান প্রধান আমদানিকারক দেশে বাংলাদেশেরও তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে।
তিনি বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি কমেছে, এমন মনে হওয়ার আরও একটি কারণ হলো আগের অর্থবছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর দুই মাসে বেশি রপ্তানি হয়েছিল। সে কারণে গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেশি হয়েছিল। আর এ বছর রপ্তানি অল্প কমাতেই মনে হচ্ছে বেশি প্রবৃদ্ধি হারিয়েছে।
তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলেও অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রপ্তানি পণ্যে সংকুচিত হয়েছে। ইপিবির তথ্য বলছে, হিমায়িত চিংড়ি কমেছে, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য কমেছে, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল কমেছে, জাহাজ রপ্তানি কমেছে। রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হওয়া অপ্রধান পণ্যগুলো হলো কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, বিশেষায়িত টেক্সটাইল পণ্য ও রাবার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য বলছে, আগের অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছিল দুই হাজার ৭৩১ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলারের। প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল দুই হাজার ২৯৯ কোটি ৬৬ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলারের, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।
ওই বছরের ছয় মাসেও যথারীতি হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি আয় কমেছিল ২৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ, কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি কমেছিল ২৩ দশমিক ২৬ শতাংশ, কেমিক্যাল প্রডাক্ট কমেছিল ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ, রাবার কমেছিল ৪০ শতাংশ, পাট ও পাটজাত পণ্য কমেছিল ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ, বিশেষায়িত টেক্সটাইল পণ্য কমেছিল ৩৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছিল জাহাজ, প্লাস্টিক, মধ্যবর্তী উৎপাদন পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য।