দক্ষিণ আমেরিকায় ফুটবল তুমুল জনপ্রিয় খেলা। বিশেষ করে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনায়।ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা দুই দেশেই প্রায় সমান-সমান। তবে দুই দেশের সমর্থকদের মধ্যে একটি পার্থক্য দীর্ঘদিনের। ব্রাজিলিয়ান সমর্থকরা দলকে সমর্থন দিতে বড় সংখ্যায় বিশ্বের নানা প্রান্তে ছুটে যান। কিন্তু আর্জেন্টাইন সমর্থকদের সংখ্যা সেই তুলনায় কম।
তবে ২০২২ বিশ্বকাপ দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। হাজারো সমর্থক দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি থেকে মেসিদের সমর্থন দিতে হাজির হয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষুদ্র দেশ কাতারে। পুরো আসরজুড়ে গ্যালারিতে আর্জেন্টিনার জার্সির দাপুটে উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন লিওনেল মেসির সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপকে ঘিরে উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ সহ বহু দেশে।
বার বার স্বপ্ন ভাঙায় হতাশ হয়ে পড়া সমর্থকরা কাতারে দেখেছে নতুন এক আর্জেন্টিনা দলকে। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হারলেও সমর্থকরা সমর্থন দিয়ে গেছেন শেষ পর্যন্ত। পরে দেশে ফিরে মেসিরা পেয়েছেন বীরোচিত সংবর্ধনা, দেখেছেন তাদের ঘিরে তুমুল উন্মাদনার চিত্র। লাখো আর্জেন্টাইন রাস্তায় নেমে তাদের সাদরে গ্রহণ করেছেন। উৎসবের দেশে পরিণত হয়েছিল আর্জেন্টিনা।
উন্মাদনা কমে এলেও সমর্থকদের কথা ভোলেননি এমিলিয়ানো মার্তিনেস। গত বিশ্বকাপের গোল্ডেন গ্লাভসজয়ী আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক জানালেন, তাদের খেলা দেখার জন্য নাকি নিজ দেশের সমর্থকদের কেউ কেউ বাড়ি, গাড়িও বেচে দিয়েছেন। আজ ফিফা প্লাসের ‘আ নেশনস স্টোরি: আর্জেন্টিনা’ প্রোগ্রামে ২০২২ বিশ্বকাপ জেতার এক বছর পূর্তির কথা স্মরণ করেন মার্তিনেস। বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা গোলরক্ষক বলেন, ‘এই (২০২২) বিশ্বকাপটা ছিল পাগলাটে। আমাদের খেলা দেখার জন্য অনেক মানুষ বাড়ি-গাড়িও বেচে দিচ্ছিল। আমি টেলিভিশনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি। এত বেশি মানুষ গিয়েছিল, যা দেখে আমাদের মুখে হাসি ফুটে উঠতো। ‘
টাচলাইনে আর্জেন্টিনা খেলোয়াড়দের সঙ্গে সমর্থকদের আন্তরিক সম্পর্কও বেশ চর্চিত ছিল বিশ্বকাপে। আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনিও দলের বিশ্বকাপ জেতার পেছনে সমর্থকদের বড় অবদান দেখেন। মেসিদের কোচ বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমাদের অর্জনের পেছনে সমর্থকদের ভূমিকা রয়েছে। ধন্যবাদ যারা সেখানে (বিশ্বকাপে) আমাদের সমর্থন দিতে গেছে। আর্জেন্টিনা থেকে যারা টেলিভিশনে দেখে সমর্থন দিয়ে গেছে, তারাও ছিল সেখানে। এটা সাহস বাড়িয়ে দেয়। এটা দারুণ এক অভিজ্ঞতা ছিল। ‘
আর্জেন্টিনার সাফল্যের পেছনে ভূমিকা আছে দলের খেলোয়াড় ও স্টাফদের পরিবারের সদস্যরাও। এ নিয়ে মার্তিনেস বলেন, ‘সবচেয়ে আনন্দের দিন ছিল, যেদিন আমাদের পরিবার এসেছিল। একটা সময় আমাদের সন্তানরাও অনুশীলন ক্যাম্পে চলে আসতো এবং তারাও এখানে খেলাধুলা করেছে। বাচ্চাদের আনন্দ করতে দেখা এবং সবাই একসঙ্গে থাকার সময়টা ছিল দারুণ। আমরা এক পরিবারের মতো ছিলাম যাদের স্বপ্নও একই। ‘
স্কালোনি জানালেন, আর্জেন্টিনা থেকে পরিবারের সদস্যদের উড়িয়ে আনার পেছনে উদ্দেশ্য ছিল মূলত দলের ওপর চাপ কমানো। প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে হেরে যাওয়ার পর আচমকা এই সিদ্ধান্ত নেন আর্জেন্টিনা কোচ। যা পরে ম্যাজিকের মতো কাজে লেগে যায়। এ নিয়ে আর্জেন্টিনা কোচ বলেন, ‘গ্রুপ পর্বের প্রথম হেরে যাওয়ার পর আমাদের ওপর দিয়ে যা গেছে, এরপর আসলে চাপ অনেকটা কমে গিয়েছিল। দিনশেষে আমরা চেষ্টা করি খেলোয়াড়দের ‘ভেতরের শিশু’কে জাগাতে। যেমন অনেকের শৈশবের স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপে খেলার। ওই অনুভূতিটা মনে রাখতে হবে। তুমি চেয়েছিল, এই যে এখানে!’
শৈশবের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার অনুভূতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে মার্তিনেস বলেন, ‘মুহূর্তগুলো নিয়ে যতবার ভাবি, ততবার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। ‘
সারাজীবনের স্বপ্ন পূরণ হওয়া তথা বিশ্বকাপ জেতার অনুভূতি নিয়ে মেসি বলেন, ‘আমি অনেকবার বলেছি, আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জেতা ছিল আমার স্বপ্ন। আমি সত্যিই ভাগ্যবান যে, আমি জাতীয় দল, ক্লাব পর্যায় এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে সবকিছু জেতার স্বাদ পেয়েছি। আমি আনন্দের সঙ্গে খেলেছি এবং দারুণ সময় কাটিয়েছি। আমি এর চেয়ে বেশি আর কিছু চাইতে পারতাম না। ‘
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩
এমএইচএম