ঢাকার ধামরাই উপজেলার কুশুরা ইউনিয়নের বান্নল বোচাইবাড়ি গ্রামের বোচাইবাড়ি খালপাড় ঘেঁষে একটু এগোলেই দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির বেশ কয়েকটি গাছ। সেখানে লতাপাতার মধ্যে আছে দুটি পিটালিগাছ। গাছ দুটি দিয়ে কয়েক দিন ধরে টিপটিপ করে পানি পড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি দূরদূরান্তের অনেকে গাছ দুটি দেখতে সেখানে ভিড় করছেন। অলৌকিক পানি ভেবে গাছের নিচে পলিথিন ধরে কেউ কেউ সেই পানি বোতলে ভরে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সাধারণত গাছের ভাস্কুলার সিস্টেমে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে এমন ঘটনা ঘটে। এই পানি পান করে কোনো উপকার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। উল্টো গাছে বিষাক্ত কোনো উপাদান থাকলে ক্ষতির সম্ভাবনা আছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের এক্সপেরিমেন্টাল কর্মকর্তা আবদুর রহিম গাছটি শনাক্ত করে প্রথম আলোকে বলেন, গাছটিকে অঞ্চলভেদে পিটালি, মোড্ডা, লাটিম, লাড্ডু, মেড়াগোটা, মেড়া, গোটাগামার বলা হয়।
আজ সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন লতাগুল্মে ভরা খালপাড়ের একটি গাছের নিচে বেশ খানিকটা জায়গা পরিষ্কার করা। তবে ১৫–২০ ফুট দূরে অন্য গাছটির চারপাশ লতাপাতায় ঘেরা। গাছ দুটির উচ্চতা ৩০–৪০ ফুট। গাছ দুটির পাতা, ডাল, কাণ্ড বেয়ে টিপটিপ করে পানি পড়ছে। তবে একটি গাছের তুলনায় অন্যটি দিয়ে একটু বেশি পানি পড়ছে।
গাছ দুটি ঘিরেই গত মঙ্গলবার থেকে নানা জল্পনাকল্পনা শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা গাছের নিচে প্রতিদিন ভিড় করছেন। বড় আকৃতির পলিথিন পেতে সংগ্রহ করছেন পানি। পরে পলিথিনে জমা পানি বোতলে ভরে সংগ্রহ করছেন। এ ছাড়া দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই গাছটি দেখতে আসছেন। তাঁরাও একই প্রক্রিয়ায় পানি সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা রিপন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গলবার থিকা খরার মধ্যে (রোদ) দেখি গাছ ভিজা। দেখি বৃষ্টির মতন পানি পড়তাছে। মাইনসে (মানুষজন) আইহা (এসে) পানি নিতাছে। রোগ ভালো হইব, তাই বোতলে পানি নিতাছে।’
মো. শিহাব নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘মানুষ বিশ্বাস করতাছে, এই পানি খাইলে রোগ ভালো হইয়া যাইব। পানি তো অল্প অল্প কইরা পড়ে, তাই নিচে পলিথিন বিছাইয়া পানি ধইরা এরপর বোতলে ভইরা নিয়া যায়। বাড়িতে নিয়া ওই পানি খায়। কয়জন তো বলছে, পানি খাইয়া তাগো রোগ ভালো হইয়া গেছে।’
ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী প্রথম আলোকে বলেন, কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা এখনো কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন। এ বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান না থাকায় তাঁরা না বুঝেই এমন করে থাকেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়ে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নুহু আলম প্রথম আলোকে বলেন, বেঁচে থাকার জন্য গাছ মাটি থেকে পানি সংগ্রহ করে। মাটির মধ্যে যে ক্যাপিলারি ওয়াটার থাকে, সেই পানি গাছের মূল ভাস্কুলার সিস্টেমের মাধ্যমে গাছের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পৌঁছে দেয়। কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভাস্কুলার সিস্টেমের কোনো একটি জায়গায় যদি প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয় অর্থাৎ কোনো জায়গায় ক্ষত তৈরি হলে পানি ওপরে না গিয়ে সেখান দিয়ে বের হয়ে যায়। এটি খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটি কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়। এই পানি খেয়ে কোনো উপকার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদি গাছটিতে বিষাক্ত উপাদান থাকে, তবে পানি খেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।