রেপো হার অপরিবর্তিত রাখল আরবিআই

রেপো হার অপরিবর্তিত রাখল আরবিআই

আবারও রেপো হার অপরিবর্তিত রেখেছে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। মুদ্রানীতির ঘোষণায় আরবিআইয়ের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস জানিয়েছেন, অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেপো হার নির্ধারণ করা হয়েছে, অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী করেছে, তার ভিত্তিতে নয়।

আজ বৃহস্পতিবার আরবিআইয়ের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস জানিয়েছেন, আর্থিক নীতিনির্ধারণবিষয়ক কমিটি (এমপিসি) সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আপাতত ভারতের রেপো হার বাড়ানো হবে না। অর্থাৎ দেশটিতে রেপো হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশই থাকছে। ধারণা করা হচ্ছে, এতে পরোক্ষভাবে হলেও ভারতের বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণগ্রহীতারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন। প্রতি দুই মাস অন্তর আরবিআই রেপো হার ঘোষণা করে থাকে। এ লক্ষ্যে ৬ জুন এমপিসির বৈঠক শুরু হয়, আজ বৃহস্পতিবার সকালে বৈঠক শেষ হওয়ার পর গভর্নর শক্তিকান্ত দাস মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন।

ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এসেছে—রেপো হার অপরিবর্তিত রাখার কারণ হিসেবে রিজার্ভ ব্যাংক এ কথা বলেছে। কিন্তু সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এখনো অনেকটা বেশি। আরবিআই মনে করছে, চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ১ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে শক্তিকান্ত দাস বলেছেন, ‘হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার ৪ শতাংশের ওপরে থাকবে। তবে মার্চ-এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৭ শতাংশে উঠলেও তা অনেকটা কমানো গেছে। এ পরিস্থিতিতে রেপো হার বাড়িয়ে বাজারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে চাইছে না রিজার্ভ ব্যাংক।’

ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটি সুদের হার নির্ধারণের জন্য খুচরা মূল্যস্ফীতির হিসাব বিবেচনা করে। গত জানুয়ারিতে ভারতে খুচরা মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে যা কমে হয় ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এরপর মূল্যস্ফীতির হার কম আসায় রেপো হার অপরিবর্তিত রেখেছে আরবিআই।

এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ; প্রথম প্রান্তিকের জন্য ৮ শতাংশ, দ্বিতীয় প্রান্তিকের জন্য ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, তৃতীয় প্রান্তিকের জন্য ৬ শতাংশ আর চতুর্থ প্রান্তিকের জন্য ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।

শক্তিকান্ত দাস আরও জানান, ২ জুন ভারতের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৫৯৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে আরবিআই গত মে মাসে বাজারে বিদ্যমান দুই হাজার রুপির নোট বাতিল ঘোষণা করে। নোট জমা দেওয়ার জন্য চার মাস সময় দেওয়া হয়। তবে শক্তিকান্ত দাস জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে দুই হাজার রুপির অর্ধেক নোট ব্যাংকে জমা পড়েছে।

এদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে গত বছরের মে মাস থেকে পর্যায়ক্রমে ২৫০ ভিত্তি পয়েন্ট রেপো হার বাড়িয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক। তবে গত এপ্রিল মাসেও রেপো হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় আরবিআই-৬ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ এ নিয়ে টানা দুই বৈঠকে রেপো হার অপরিবর্তিত রাখল আরবিআই। রিজার্ভ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের ফলে গৃহঋণ, গাড়ির ঋণ ও অন্যান্য ঋণের সুদের হার অপরিবর্তিত থাকছে। এতে মধ্যবিত্ত কিছুটা স্বস্তি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে সুদহারে অর্থ ধার নেয়, তাই রেপো নামে পরিচিত। রেপো হার বাড়ানো হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ ধার করতে ব্যাংকগুলোকে বেশি সুদ গুনতে হয়। মূলত বাজারে অর্থের প্রবাহ কমাতে এমন পদক্ষেপ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। ধারণাটি হলো বেশি সুদের কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কম টাকা ধার করবে এবং তাতে ঋণও কমে যাবে। পরিণামে মূল্যস্ফীতিও কমবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS