ডিসেম্বরেই শুরু হবে নারী প্রিমিয়ার লিগ

ডিসেম্বরেই শুরু হবে নারী প্রিমিয়ার লিগ

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ডিসেম্বরেই নারী ফুটবল লিগ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানুয়ারির মধ্যেই নারী প্রিমিয়ার লিগ শেষ করার পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করেছে তারা। বুধবার বাফুফে ভবনে অনুষ্ঠিত সভা শেষে সহ-সভাপতি ও মার্কেটিং কমিটির চেয়ারম্যান ফাহাদ করিম জানান, এই লিগ কেবল একটি সাধারণ প্রতিযোগিতা নয়, বরং আগামী মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এএফসি নারী এশিয়ান কাপকে সামনে রেখে নেওয়া দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি পরিকল্পনার অংশ, যা বাফুফে নাম দিয়েছে ‘মিশন অস্ট্রেলিয়া’।

ইতিহাস গড়ে প্রথমবার এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ নারী দল। সেই মঞ্চে ভালো করতে খেলোয়াড়দের নিয়মিত প্রতিযোগিতায় রাখতেই দ্রুত লিগ আয়োজনের পথ বেছে নিয়েছে বাফুফে।

ওমেন্স উইংয়ের উদ্যোগে বিপিএলের সব দলসহ পূর্বের নারী লিগে অংশ নেওয়া ক্লাবগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আগ্রহ দেখানো ১৪টি দলের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ১০টি ক্লাবকে তাৎক্ষণিক অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আরও দুই ক্লাবকে শর্তসাপেক্ষ ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে; এর মধ্যে একটি ক্লাব শর্ত পূরণ করতে পারলে মোট ১১ দল নিয়ে এক রাউন্ডের লিগ হবে। এএফসি ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে হলে এক দলকে অন্তত ১০ ম্যাচ খেলতে হয়, সেই বিবেচনায়ই ১১ দল নিয়ে লিগ আয়োজনের প্রস্তুতি।

এবারের নারী লিগে প্রথমবার যোগ দিচ্ছে কয়েকটি নতুন দল; বিকেএসপি এফসি, আনসার, পুলিশ এফসি এবং একটি কর্পোরেট দল (রাজশাহী ওয়ারিয়র্স/স্টার্স)। পাশাপাশি পূর্বের মৌসুমের নিয়মিত পাঁচ দলও থাকছে। ক্লাবগুলোকে দুই সপ্তাহের প্রস্তুতিসময় দেওয়া হলেও তারা চার সপ্তাহ চেয়েছিল। বাফুফের লক্ষ্য ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে লিগ শুরু করা এবং জানুয়ারির শেষ দিনেই তা শেষ করা, কারণ ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু হবে ‘মিশন অস্ট্রেলিয়া’কে সামনে রেখে।

লিগের সব ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে কমলাপুর স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইটে। প্রয়োজনে প্রতিদিন তিনটি করে ম্যাচ আয়োজনের পরিকল্পনাও আছে। হেড কোচ পিটার বাটলারের পরামর্শে এবার চালু হচ্ছে ‘পুল সিস্টেম’-তিনটি পুল থেকে ক্লাবগুলো চাইলে নির্দিষ্টসংখ্যক খেলোয়াড় নিতে পারবে। তবে বাধ্যতামূলক নয়; কোনো ক্লাব চাইলে একাডেমির খেলোয়াড় দিয়েই দল সাজাতে পারবে। সার্ভিস দলের খেলোয়াড়রা তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের হয়েই খেলবেন।

যুব উন্নয়নকে গুরুত্ব দিতে অনূর্ধ্ব-১৭ ও অনূর্ধ্ব-২০ দলের খেলোয়াড়দের সেরা একাদশে রাখাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তারা বদলি হলে তাদের স্থলাভিষিক্ত খেলোয়াড়ও একই বয়সভিত্তিক হতে হবে।

আরেকটি বড় অগ্রগতি হলো এই লিগ এবার ফিফার ওমেন্স ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় এসেছে। চলতি মৌসুম এবং পরবর্তী মৌসুম; দুটি মৌসুমেই ফিফা লিগ মনিটর করবে এবং নিজস্ব পয়েন্ট অব কন্টাক্ট সরবরাহ করবে। যা নারী ফুটবলের কাঠামোগত উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।

ক্লাবগুলো সর্বোচ্চ দুই বিদেশি ফুটবলার নিবন্ধন ও মাঠে নামানোর সুযোগ পাবে। এজন্য ফিফা টিএমএস ও ফিফা কানেক্ট সিস্টেমে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক।

পূর্বের মৌসুমগুলোতে খেলোয়াড়দের পেমেন্ট নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। এবার সব খেলোয়াড়ের চুক্তি ফিফা কানেক্টে সংরক্ষিত থাকবে এবং প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটি ও কম্পিটিশন কমিটি তা নজরদারি করবে। কেউ চুক্তি লঙ্ঘন করলে বিধিসম্মত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বসুন্ধরা কিংস অংশ নেবে কি না, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন ফাহাদ করিম। তিনি জানান, ওমেন্স উইং সব ক্লাবকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, তবে নতুন মৌসুমে কেবল পুলিশ এফসি আগ্রহ দেখিয়েছে।

নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ সম্পর্কেও কথা বলেন ফাহাদ করিম। তিনি জানান, বাফুফে এ ধরনের লিগ চালুর পরিকল্পনা করেছে, তবে সময়ের সীমাবদ্ধতায় এই মৌসুমে তা সম্ভব নয়। ২০২৬-২৭ মৌসুম থেকে দুই টায়ারের লিগ (প্রিমিয়ার ও ফার্স্ট ডিভিশন) করার লক্ষ্য রয়েছে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি সহায়ক হলে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফরম্যাটেও লিগ আয়োজন করা হতে পারে।

শেষে ফাহাদ করিম বলেন, ‘আমরা মেয়েদের জন্য নিয়মিত, প্রতিযোগিতামূলক ও দীর্ঘমেয়াদি লিগ চাই, যাতে তারা নির্দিষ্ট সময় ধরে ম্যাচ খেলতে পারে, আয় করতে পারে ও নিজেদের উন্নতি ঘটাতে পারে। আপাতত আমাদের প্রধান লক্ষ্য; এশিয়ান কাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই লিগকে সফলভাবে আয়োজন করা।’

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS