১৮ বছর হলেই জার্মানিতে বাধ্যতামূলক সামরিক নিবন্ধন

১৮ বছর হলেই জার্মানিতে বাধ্যতামূলক সামরিক নিবন্ধন

ইউরোপে নিরাপত্তা পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাওয়ায় জার্মানি সামরিক খাতে বড় পরিবর্তনের পথে এগোচ্ছে। দীর্ঘ আলোচনা, মতবিরোধ ও রাজনৈতিক চাপের পর দেশটির শাসক জোট বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য নিবন্ধন চালুর বিষয়ে নতুন একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। এ নিবন্ধন ব্যবস্থা ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।

জার্মানির ক্ষমতাসীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন ( সিডিইউ) ও সোশাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ( এসপিডি) জোট দীর্ঘ আলোচনার পর দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর ৭৫তম বার্ষিকীতে এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে।

জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ সামরিক প্রশিক্ষণ আর বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যোগদান এক নয়। এর মাধ্যমে একটি জাতীয় সামরিক রেজিস্ট্রি তৈরি করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে প্রয়োজন দেখা দিলে সেখান থেকে দ্রুত সেনা সংগ্রহ করা যায়।

১৮ বছর হলেই  নিবন্ধন

জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশিত নীতিমালা অনুযায়ী, ১৮ বছর পূর্ণ করা সব পুরুষের জন্য সামরিক নিবন্ধন বাধ্যতামূলক থাকবে। তবে নারীরা চাইলে স্বেচ্ছাসেবী বা ঐচ্ছিকভাবে হিসেবে নিবন্ধন করতে পারবেন। এ সময় অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য, স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর এবং শারীরিক ও মৌলিক সক্ষমতার তথ্য জমা দিতে হবে। সরকার চাইলে যেকোনো নিবন্ধিত ব্যক্তির তথ্য ও স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা পুনরায় যাচাই ও সামরিক যোগ্যতার পরীক্ষা নিতে পারবে।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, নিবন্ধন মানেই সেনাবাহিনীতে যোগদান নয়। তবে নিবন্ধনকৃত ব্যক্তিদের তালিকা জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা হবে।

কেন এই নতুন সিদ্ধান্ত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইউরোপজুড়ে নিরাপত্তা উদ্বেগ বেড়েছে। অনেক দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছে।  ন্যাটোতে জার্মানির দায়িত্ব বাড়ার পাশাপাশি জার্মানি নিজের সেনাবাহিনীকে আরও আধুনিক করতে চায়। এজন্য সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা বাড়ানো দেশটির জন্য অগ্রাধিকারের বিষয় হয়ে উঠেছে। এজন্য জার্মানি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সেনাবাহিনীর সক্রিয় সদস্যসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছে। সামরিক অবকাঠামো, অস্ত্রভান্ডার ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাও নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে।

জোটের মতবিরোধ যেভাবে মেটানো হলো

তরুণদের সামরিক প্রশিক্ষণের নতুন এ নিয়ম চালু ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে এসপিডি ও সিডিইউ জোটের মধ্যে প্রথম থেকেই মতবিরোধ ছিল। সিডিইউ এর মতে, আধুনিক সেনাবাহিনীর জন্য স্বেচ্ছাসেবী মডেলই যথেষ্ট। তরুণদের আকৃষ্ট করতে বেতন, সুবিধা ও ক্যারিয়ার-রাস্তাকে আরও আকর্ষণীয় করতে হবে। অন্যদিকে এসপিডির যুক্তি ছিল স্বেচ্ছাসেবী মডেল দিয়ে লক্ষ্য পূরণ সম্ভব নয়। প্রয়োজন হলে আবারও বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। অবশেষে উভয় পক্ষ একটি সমঝোতায় পৌঁছায়, স্বেচ্ছাসেবী হিসেবেই নিয়োগ থাকবে কিন্তু প্রয়োজন না মিটলে রেজিস্ট্রিতে থাকা নির্দিষ্ট বয়সের যুবকদের বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে  ডাকা হবে।  প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে নিবন্ধন শুরু হবে।  প্রশিক্ষণ ও রিক্রুটিং কাঠামোর জন্য ২০২৭ সাল থেকে নিবন্ধিতদের ডাকা হবে।

জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন মডেল কার্যকর হলে সেনাবাহিনীতে যোগদানের সুযোগ, প্রশিক্ষণ, স্কিল ডেভেলপমেন্ট, বৃত্তি ও চাকরির পথ আরও উন্মুক্ত হবে। স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা, সমসাময়িক প্রশিক্ষণ এবং বিশেষ কোর্সের পরিকল্পনাও রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS