দেশীয় উদ্যোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ না করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পক্ষে সুবিধাজনক ধারায় টেলিযোগাযোগ খাতের নতুন লাইসেন্সিং গাইডলাইন চূড়ান্ত করা হলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
শনিবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘টেলিযোগাযোগ খাতের নতুন নীতিমালা ও দেশীয় উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা এই হুঁশিয়ারি দেন।
ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, দেশীয় উদ্যোক্তারা বাঁচলে দেশ বাঁচবে- এটা সবারই জানা। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে একাধিকবার জানানো হয়েছে, নতুন নীতিমালা দেশীয় উদ্যোক্তাদের স্বার্থের পরিপন্থী। কিন্তু এসব উদ্বেগ আমলে নেওয়া হয়নি। বরং বিদেশি তিনটি মোবাইল অপারেটরের স্বার্থেই গাইডলাইন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। ফলে প্রায় ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সঙ্গে জড়িত দেশীয় আইএসপি উদ্যোক্তারা অস্তিত্ব সংকটে পড়বেন। ইন্টারনেটের দাম অন্তত ২০ শতাংশ বাড়বে। আমরা জানতে পেরেছি ১৩ তারিখের মধ্যে চারটি নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। যদি চূড়ান্ত গাইডলাইনে দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিপন্ন করা ধারাগুলো থেকে যায়, তবে আমরা আইনগত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো। আমাদের আহ্বান এটা আইনিভাবে মোকাবিলা করা হোক।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ২০০৮ সালের আইএলডিটিএস নীতির হালনাগাদের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সংস্কারের নামে এখন একটি গোষ্ঠীর একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হচ্ছে। বিদেশি উদ্যোক্তারা সব লেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারবে, তাহলে দেশীয় উদ্যোক্তাদের সব লেয়রে বিনিয়োগের বাধা কোথায়?
আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভুঁইয়া বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সব লেয়ারে বিনিযোগের সুযোগ রাখায় আমরা দেখতে পাচ্ছি ১০ লাখ কর্মচারী বেকার হয়ে যাবে। বিদেশিরা, না দেশীয় উদ্যোক্তারা ব্যবসা করবে তা আমাদের ঠিক করতে হবে।
টেলিযোগাযোগ পলিসি বিশ্লেষক আবু নাজম তানভীর হোসাইন বলেন, বর্তমান সরকারের অল্প সময়ে টেলিযোগাযোগ খাতে একের পর এক খসড়া আইন ও নীতি আসছে— যেটি নজিরবিহীন। বলা হচ্ছে, ইন্টারনেট বন্ধ করা হবে না; এটা আসলে স্ট্যান্টবাজি। জাতীয় জরুরি প্রয়োজনে ইন্টারনেট বন্ধ করা হতে পারে না? হয়তো এমন থাকতে পারে যে রাষ্ট্রপতি বা প্রদান বিচারপতির অনুমতি নিতে হবে।
সামিট কমিউনিকেশনের কর্মকর্তা কে এম তারিকুজ্জামান বলেন, দেশীয় উদ্যোক্তারা মনোপলি ভেঙে প্রতিযোগিতা ও সুলভ সেবা নিশ্চিত করেছিলেন। কিন্তু নতুন নীতিতে আবারও সেই মনোপলি যুগে ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। নতুন পলিসির মাধ্যমে এই সেক্টরের অপমৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে।
বাহন লিমিটেডের রাশেদ আমিন বিদ্যুত বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান ছিল বৈষম্য দূর করার জন্য। কিন্তু টেলিযোগাযোগ খাতে নতুন নীতিতে বিদেশিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে সেই বৈষম্যই পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।
ফাইবার অ্যাট হোমের আব্বাস ফারুক বলেন, এখন সময় এসেছে দেশীয় উদ্যোক্তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। দেশীয় উদ্যোক্তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে আসতে হবে এবং একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে।
আইজিডব্লিউ ফোরামের চিফ অপারেটিং অফিসার মুশফিক মনজুর বলেন, লাইসেন্স পলিসি নিয়ে মাত্র একবার আমাদের মতামত নেওয়া হয়েছে। মনে হচ্ছে সরকার দেশীয় উতদ্যাক্তাদের ধ্বংস করার জন্য নেমেছে।
আইসিএক্স অপারেটরদের সংগঠন এওআইবি’র কেন্দ্রীয় নেতা এম নুরুল আলম বলেন, লাইসেন্স ওপেন করার নামে দেশীয় উদ্যোক্তাদের ধ্বংস করবেন না। নতুন পলিসিতে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা টিকবে না, ছোট ছোট বিনিয়োগকারীরা টিকবে না, এই খাতের কর্মচারীরাও টিকবে না।
ভিউজ বাংলাদেশ সম্পাদক রাশেদ মেহেদীর সঞ্চালনায় সাংবাদিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশ্লেষক মাসুদ কামাল, টিআরএনবি’র সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন বক্তব্য দেন।