বাংলাদেশে দলীয় খেলার জনপ্রিয়তায় ফুটবল ও ক্রিকেটের পর তৃতীয় স্থানে হকি। তবে এতদিন আলোচনার কেন্দ্রে ছিল শুধু পুরুষ হকি। এবার বদলাতে যাচ্ছে সেই চিত্র— ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বড় অঙ্কের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে নারী হকি।
‘অপরাজেয় আলো নারী হকি টুর্নামেন্ট’ শিরোনামে শুরু হচ্ছে সারাদেশব্যাপী জেলা দলগুলোর প্রতিযোগিতা। এই আসরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এগিয়ে এসেছে ব্র্যাক ব্যাংক, যারা করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) ফান্ড থেকে প্রায় ৯৯ লাখ টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনকে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ফেডারেশন ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্র্যাক ব্যাংকের চিফ কমিউনিকেশনস অফিসার ইকরাম কবীর বলেন, “নারী হকি আমাদের কাছে এক অনুপ্রেরণার গল্প। বছরের শুরুতে নারী ডেভেলপমেন্ট কাপে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলাম, এবার আরও বড় পরিসরে যুক্ত হচ্ছি। এই প্রকল্পের সম্পূর্ণ অর্থায়ন ও তদারকি আমাদের সিএসআর ফান্ড থেকেই হবে।”
এ আয়োজনকে দেশের হকির জন্য ‘একটি বড় মাইলফলক’ বলে উল্লেখ করেছেন হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক লে. কর্নেল রিয়াজুল হাসান (অব.)। তিনি বলেন, “হকিতে সবসময়ই আর্থিক সংকট ছিল। নারী হকির জন্য এক কোটি টাকার সহায়তা সত্যিই বিরল। আঞ্চলিক পর্ব থেকেই প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি হবে।”
রাজশাহী, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও যশোর—এই চার শহরে ১৮টি জেলা দল নিয়ে শুরু হবে প্রাথমিক পর্ব। রাজশাহী ও ময়মনসিংহে থাকবে পাঁচটি করে দল, কুমিল্লা ও যশোরে অংশ নেবে চারটি করে দল। প্রতিটি ভেন্যুতে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে খেলা হবে, এরপর শীর্ষ দুই দল লড়বে আঞ্চলিক ফাইনালে।
চার ভেন্যুর চ্যাম্পিয়ন দলগুলো বিকেএসপির নারী দলের সঙ্গে খেলবে জাতীয় পর্যায়ের চূড়ান্ত পর্বে, যা আগামী ডিসেম্বরের শেষ দিকে ঢাকায় আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
ফেডারেশন জানিয়েছে, আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন দল চাইলে অন্য জেলার খেলোয়াড়কেও দলে নিতে পারবে, যাতে প্রতিযোগিতা আরও প্রাণবন্ত হয়।
সত্তরের দশকে নারী হকির যাত্রা শুরু হলেও তা ধারাবাহিকতা পায়নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই স্থবিরতা কিছুটা কেটেছে। অনূর্ধ্ব–১৮ নারী দল প্রথমবার এশিয়া কাপে অংশ নিয়ে ব্রোঞ্জ জেতার পর আত্মবিশ্বাস বেড়েছে ফেডারেশনের। এখন তাদের লক্ষ্য সিনিয়র নারী দলকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করা।
ফেডারেশন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সহায়তায় এশিয়ান গেমসের বাছাইপর্বে নারী দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।