কুমিল্লা-লালমাই-চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-বেগমগঞ্জ এবং বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী-রামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার দুটি পৃথক প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৭২ কোটি ৮৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৩ টাকা।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সচিবালয়ে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
কুমিল্লা–লালমাই–চাঁদপুর–লক্ষ্মীপুর–বেগমগঞ্জ মহাসড়ক উন্নয়ন
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ‘কুমিল্লা-লালমাই-চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-বেগমগঞ্জ এবং বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী-রামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪-লেন সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের প্যাকেজের (পিডব্লিউ-০৬) পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মীর হাবিবুল আলম-এর কাছ থেকে ১৮১ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার ৫৪৫ টাকায় প্রকল্পের প্যাকেজটির পূর্ত কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্যাকেজের আওতায় থাকবে: বেগমগঞ্জ–সোনাইমুড়ী–রামগঞ্জ সড়কের প্রশস্তকরণ, শক্তিশালীকরণ, শক্ত ফুটপাত, শক্ত কাঁধ, ৪টি আরসিসি বক্স কালভার্ট, বাস বে, পার্শ্ব সড়ক, সড়ক বিভাজনকারী, প্রতিরক্ষামূলক কাজ ও সড়কের পাশের ড্রেন নির্মাণ।
এ ছাড়া একই প্রকল্পের প্যাকেজের (পিডব্লিউ-০৭) পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এই প্যাকেজের কাজও সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মীর হাবিবুল আলম পেয়েছেন। এতে ব্যয় হবে ১৯১ কোটি ৫২ লাখ ১২ হাজার ৮৩৮ টাকা।
প্যাকেজের আওতায় রয়েছে: সড়ক প্রশস্তকরণ, শক্তিশালীকরণ, পৃষ্ঠতল নির্মাণ, শক্ত পেভমেন্ট, হার্ড শোল্ডার, ৫টি আরসিসি বক্স কালভার্ট, বাস বে, সাইড রোড, রোড ডিভাইডার, প্রতিরক্ষামূলক কাজ, ড্রেন এবং সড়ক সুরক্ষা ব্যবস্থা।
চট্টগ্রামে মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়তলা ভবন নির্মাণ
চট্টগ্রামে বাংলাদেশ মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে ছয়তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণে ১৫৮ কোটি ৮৭ লাখ ৩৭ হাজার ৫৬৯ টাকা ব্যয়ে একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। নির্মাণ কাজটি যৌথভাবে পেয়েছে দি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও সেলটেক ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পের পূর্ত কাজ ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। একনেক এ প্রকল্পের সংশোধিত অনুমোদন দেয় ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর। এই প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে ছয়তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের পাশাপাশি সিভিল, পাম্পিং, বৈদ্যুতিক, অগ্নি নির্বাপণ, নিরাপত্তা ও গ্যাস সংযোগ স্থাপন করা হবে।
বাংলাদেশ মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় দেশের ৩৭তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় এবং বিশ্বের ১২তম মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়। এটি নীল অর্থনীতি (ব্লু ইকোনমি) বাস্তবায়নে দেশের প্রথম বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে মেরিন ক্যাডেটরা আন্তর্জাতিক মানের ব্যাচেলর অব মেরিটাইম সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
চট্টগ্রাম বে-টার্মিনাল প্রকল্পে ২৫ কোটি টাকায় পরামর্শক নিয়োগ
চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানিকে (আইআইএফসি) নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য— চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা ও সেবা বাড়ানো, ৩০ বছরের জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা এবং যানজট নিরসনের লক্ষ্যে নতুন বে-টার্মিনাল নির্মাণের মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্য প্রসার ঘটানো। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
এক হাজার ১৭৮ কোটি টাকায় দুই লাখ টন সার আমদানি
সরকার ২ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ১৭৮ কোটি ৭৭ লাখ ৪২ হাজার ৬০ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে— ১ লাখ ১০ হাজার টন ইউরিয়া, ৬০ হাজার টন টিএসপি, ৩৫ হাজার টন এমওপি সার। এ ছাড়া ১৯৯ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক অ্যাসিড আমদানির প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ইউরিয়া সার আমদানি
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে ৪০ হাজার টন ব্যাগড গ্রানুলার ইউরিয়া কেনা হবে ১৯২ কোটি ৮ লাখ ৪৭ হাজার ৬৮০ টাকায় (প্রতি টনের দাম ৩৯২.৩৩ মার্কিন ডলার)। একইভাবে সৌদি আরবের সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকেও ৪০ হাজার টন ইউরিয়া কেনা হবে একই দামে ও পরিমাণে। কাফকো, বাংলাদেশ থেকে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া আমদানি করা হবে ১৩৯ কোটি ৫৩ লাখ ৬০ হাজার টাকায় (প্রতি টন ৩৮০ মার্কিন ডলার)।
এমওপি ও টিএসপি সার
রাশিয়ার জেএসসি ফরেন ইকোনমিক কর্পোরেশন (প্রোডিন্টর্গ) থেকে ৩৫ হাজার টন এমওপি সার আমদানি করা হবে ১৫২ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় (প্রতি টন ৩৫৬.২৫ মার্কিন ডলার)। মরক্কোর ওসিপি নিউট্রিক্রপস থেকে দুটি লটে মোট ৬০ হাজার টন টিএসপি সার আমদানি করা হবে, প্রতি লটের ব্যয় ২০১ কোটি ২২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা (প্রতি টন ৫৪৮ মার্কিন ডলার)।
ফসফরিক অ্যাসিড আমদানি
সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক মেসার্স সান ইন্টারন্যাশনাল এফজেডই (প্রস্তুতকারক: চীনের গুয়াংসি পেংইউ ইকো-টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ফসকর প্রাইভেট লিমিটেডের কাছ থেকে ২০ হাজার টন ফসফরিক অ্যাসিড কেনা হবে ১৯৯ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকায়।
প্রতি টনের দাম ৭৭৫ মার্কিন ডলার (ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ আনুমানিক ৫%)।