রাতের রাজধানী কী অনিরাপদ?
ডাকাতির মাধ্যমে সপ্তাহ খানেক আগে একটি পিকআপ হাতিয়ে নেয় ডাকাতচক্র। সেই পিকআপ নিয়ে গত পাঁচ-ছয় দিন ধরে রাজধানীতে রাতে সড়কে চলাচলকারী পথচারী, রিকশা যাত্রীদের সুবিধাজনক স্থানে গতিরোধ করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ডাকাতি করে আসছিল চক্রটি।
ডাকাতির কবল থেকে বাদ যায়নি খোদ পুলিশ সদস্যও। তবে কী রাতের রাজধানী অনিরাপদ? এমন প্রশ্নে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন অনিরাপদ বলব না। পিকআপ চেক করা, নজরদারি বাড়ানোসহ চেকপোস্ট সক্রিয় রাখার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে।
গত ১২ মে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি, পরদিন রাতে তেজগাঁও ও বনানী থানা এলাকায় আরও দুটি ডাকাতি হয়। বাদ যায়নি খোদ রাজারবাগ এলাকাও। যেখানে পাশেই পুলিশের বড় কয়েকটি ব্যারাক। ওইদিন ভোর পৌনে ৪টার দিকে স্পেশাল ব্রাঞ্চে কর্মরত নারী কনস্টেবলকে জিম্মি করে ডাকাত দল হাতিয়ে নেয় মোবাইল, চেইন ও ভ্যানিটি ব্যাগ।
ডাকাতির শিকার ভুক্তভোগী ওই নারী কনস্টেবল নার্গিস আক্তারের পল্টনে দায়ের করা মামলায় সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর মতিঝিল বিভাগ পুলিশ বলছে, করোনাকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও খিলগাঁও এলাকায় ওষুধের দোকানে চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনাতেও জড়িত এই চক্রটি।
সোমবার ১৫ মে রাতে রাজধানীর মহাখালী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত চক্রটিকে গ্রেপ্তার করে পল্টন থানা পুলিশ। এসময় ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র, পিকআপ ও লুণ্ঠিত টাকা এবং ৪টি স্মার্ট মোবাইল, ৩টি বাটন ফোন জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- সোহেল (৩০), আক্তার ওরফে সোহরাব (৩২), আবির হোসেন ওরফে রাসেল (২৫) ও মো. রনির (২৮)।
মঙ্গলবার মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, গত ১২ মে ভোর পৌনে ৪ টার দিকে ভিভিআইপি ডিউটির উদ্দেশ্যে রিকশাযোগে মালিবাগের স্পেশাল ব্রাঞ্চ কার্যালয়ে যাচ্ছিলেন নারী কনস্টেবল নার্গিস আক্তার। পল্টন মডেল থানাধীন রাজারবাগের পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সামনের মোড়ে পৌঁছামাত্র পেছন থেকে আসা একটি হলুদ ও নীল রঙের পিকআপ তার রিকশাকে চাপ দেয়।
এ সময় পিকআপের পেছন থেকে দুজন নেমে একজন ওই কনস্টেবলের হাত ধরে এবং অপরজন গলায় চাকু ধরে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে তার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন, হাতে থাকা ছোট ভ্যানেটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
তার ব্যাগের ভেতরে নগদ ছিল ৫ হাজার টাকা, একটি শাওমি নোট ৮ মোবাইল ফোন, একটি বাটন স্যামসাং মোবাইল ফোন ও এসবির আইডি কার্ড। জোর করে এসব ছিনিয়ে নিয়ে ডাকাত দলের পিকআপটি দ্রুত ডান দিকে মোড় নিয়ে শাহজাহানপুরের দিকে চলে যায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই নারী কনস্টেবল পল্টন মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
এরপর মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মতিঝিল জোন) মো. রওশানুল হক সৈকতের নেতৃত্বে পল্টন মডেল থানা এটি বিশেষ টিম শতাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ডাকাত দলকে শনাক্ত করে। পরে তাদের আটক করতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। সর্বশেষ গতরাতে মহাখালী থেকে চার ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে ডিসি হায়াতুল ইসলাম বলেন, ডাকাত দলটি রাতভর পিকআপ নিয়ে ঘুরত ঢাকা শহরে। রাজধানীর যেসব এলাকা জনাকীর্ণ নয় ও পুলিশের টহল থাকে না বা নজরদারি থাকে না সেখানে টার্গেট করে ডাকাতি করত দলটি। ১২ মে রাত সাড়ে ৩টায় ধানমন্ডিতে, চারটায় পল্টনে, পরদিন রাত ১২টা ১০ মিনিটে বনানীতে ডাকাতি করে এসে ওই রাত ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে তেজগাঁওয়ে একটি দোকান খোলা পেয়ে ডাকাতি করে। অর্থাৎ তারা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ইচ্ছামতো ঘুরেছে, সুযোগ পেলেই ডাকাতি করেছে। ডাকাত দলের প্রত্যেকেই ডাকাতি, দস্যুতা ছাড়াও একাধিক মাদক মামলার আসামি।
হায়াতুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি ডাকাত দলটি চারটি ডাকাতির ঘটনা সংঘঠিত করেছে। এর বাইরে তাদের ডাকাতির তথ্য আমরা পেয়েছি, কিন্তু থানায় কোনো রিপোর্ট হয়নি। থানায় যদি ডাকাতির মামলা হয় তবে পুলিশ এই ধরনের ডাকাত দল সম্পর্কে জানতে পারে, অভিযান পরিচালনা করতে পারে। পুলিশ কমিশনার ডাকাতি, দস্যুতার মামলা গুরুত্বসহ দেখতে নির্দেশনাও দিয়েছেন।
রাজারবাগে পুলিশের স্পেশাল এলাকা যেখানে সব সময় পুলিশ থাকে, তাছাড়া রাতভর ঘুরে ডাকাতি করছে ডাকাত দল। পুলিশ কী করছে? পুলিশ কী ব্যর্থ? শহর কী অনিরাপদ?
জানতে চাইলে ডিসি হায়াতুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরকে আমরা অনিরাপদ বলবো না। কিন্তু রাতে ট্রাক পিকআপ চলাচল করবে এটা বাস্তবতা। তবে চেকপোস্টে চেক করলে খালিই পাওয়া যায়। তাছাড়া ঢাকার সব জায়গায় তল্লাশি বা নজরদারি থাকে না। এসব সুযোগ নিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। প্রায় প্রত্যেকটি ট্রাক, পিকআপ চেক করা, নজরদারি বাড়ানো চেকপোস্ট সক্রিয় রাখার বিষয়টি আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এছাড়া পুলিশ তৎপর আছে বলেও দাবি করেন তিনি।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে সোহেলের বিরুদ্ধে দুটি, আক্তার ওরফে সোহরাবের বিরুদ্ধে দুটি মাদক ও ৪টি ডাকাতি মামলা, আমির হোসেন ওরফে রাসেলের বিরুদ্ধে তিন মাদকসহ ৫টি মামলা এবং রনির বিরুদ্ধে ৮টি মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।