চীনের ডিং লিরেনকে হারিয়ে দাবার নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারতের গুকেশ দোম্মারাজু। ১৪ রাউন্ডের খেলা ১৩ রাউন্ড শেষে দুজনেরই পয়েন্ট ছিল সাড়ে ৬ করে।তবে শেষ রাউন্ডে জিতে বাজিমাত করেন গুকেশ। ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব পাওয়ার কীর্তি গড়লেন এই ভারতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার।
এর আগে রেকর্ডটি ছিল গ্যারি ক্যাসপারভের। ১৯৮৫ সালে ২২ বছর ৬ মাস ২৭ দিন বয়সে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হন এই রুশ কিংবদন্তি। গুকেশ তা ছাড়িয়ে যান ১৮ বছর ৮ মাস ১৪ দিন বয়সেই।
জয়ের পর তিনি বলেন, ‘সম্ভবত আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত এটি! এই মুহূর্তটির জন্য ১০ বছর ধরে স্বপ্ন দেখছি আমি। ইশ্বরের প্রতি আস্থা ছিল, তিনি আমাকে অনেক দিক থেকেই সহযোগিতা করেছেন। সেজন্য আমি খুবই খুশি। আমার ক্যারিয়ার কেবল শুরু হলো। কেবল ১০ বছর হলো খেললাম। আরও দীর্ঘ সময় ধরে খেলতে চাই আমি। চূড়ায় থাকতে চাই। অবশ্যই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া মানে আমি বিশ্ব সেরা নই। এখনো ম্যাগনাস কার্লসেন খেলে যাচ্ছেন। ’
টানা পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর গতবার নিজ ইচ্ছাতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান কার্লসেন। সেবার ইয়ান নেপমনিয়াচিকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হন লিরেন। কিন্তু এবার তা ধরে রাখতে পারলেন না তিনি। আসরের শুরুটা জয় দিয়ে করলেও ১৪ রাউন্ড শেষে গুকেশের কাছে হেরে যান ৭.৫-৬.৫ ব্যবধানে।
চীনের এই গ্র্যান্ডমাস্টারকে শেষ রাউন্ডে হারাতে ৫৮ চাল চালতে হয়েছে গুকেশের। তাতে অবশ্য লিরেনেরই দায় বেশি। কেননা ৫৫তম চালে নৌকাকে এফ টুতে নিয়ে আসেন তিনি। যার ফলে একটি সৈন্য বেশি নিয়ে থাকা গুকেশের জন্য খুলে যায় জয়ের পথ। অথচ ম্যাচটি এগোচ্ছিল ড্রয়ের দিকেই।
গুকেশ বলেন, ‘আসলে সে যখন আরএফ টু চাল দিল, আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি। আমি আরবি থ্রি চাল দিয়েই ফেলেছিলাম প্রায় , কিন্তু যখন খেয়াল করলাম তার বিশপ (গজ) ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে এবং সে কেই ওয়ান চাল দিলে আমার কেই ফাইভ রয়েছে ও সৈন্য তখন কুইন হওয়ার পথে। তার মানে আমি জিততে চলেছি। যখন তা বুঝতে পারলাম, সেটা সম্ভবত আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত ছিল। ’
হেরেও তেমন কোনো আক্ষেপ নেই লিরেনের। চীনের এই গ্র্যান্ডমাস্টার বলেন, ‘ভুল করার পর আমি পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে ছিলাম। তার মুখের অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছিল সে খুব রোমাঞ্চিত এবং খুশি। আমার সেটা বুঝতে কিছুটা সময় লাগে। তবে ড্র করাটাও এতো সহজ ছিল না। আমার মনে হয় আমি বছরের সেরা টুর্নামেন্ট খেললাম। আরো ভালো হতে পারত, তবে গতকাল ভাগ্যগুণে বেঁচে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে হেরে যাওয়াটাই প্রাপ্য ছিল। আমার কোনো আক্ষেপ নেই এতে। ’
বিশ্বনাথন আনন্দের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেন গুকেশ। ভারতকে সেই খেতাব ফিরে পেতে সময় লাগল এক যুগ।