‘বাংলাদেশের জনগণ কখনো প্রভুত্ব মেনে নেয়নি, ভারতের প্রভুত্বও মেনে নেওয়া হবে না। ইস্পাত কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে ভারতের আধিপত্যকে প্রতিহত করা হবে।’
ঢাকা থেকে আগরতলা অভিমুখে লংমার্চ করে এমনই কড়া বার্তা দিয়েছেন বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
ঢাকা থেকে যাওয়া লংমার্চ বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার সীমান্তে সমাবেশে মিলিত হয়। সেখানে দেওয়া বক্তব্যে তিন সংগঠনে নেতারা আরও বলেন, দেশ নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করতে চাইলে তা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কর্মীরা প্রতিহত করবে।
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা, ভারতীয় মিডিয়ায় অপপ্রচার ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এ লংমার্চ করেছে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন।
সকাল ৯টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে লংমার্চ শুরু হয়ে পল্টন- ফকিরাপুল- ইত্তেফাক মোড় হয়ে ফ্লাইওভার হয়ে সাইনবোর্ড- চিটাগং রোড- কাঁচপুর মোড়- তারাবো- বরফা- ভুলতা, গাউছিয়া-চনপাড়া, মাধবদী- পাঁচদোনা- সাহেপ্রতাব, ভেলানগর- ইটখোলা- মারজাল- বারুইচা হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় ভৈরব পৌঁছায়। সেখানে সংক্ষিপ্ত পথসভা করে বিকেল সাড়ে ৩টায় আখাউড়া সীমান্তের সমাবেশস্থলে পৌঁছায় লংমার্চ।
ভারতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী সমাবেশে বলেন, ভারত বাংলাদেশের বন্ধু না। বিশেষ করে যেখানে শেখ হাসিনা থাকে, বাংলাদেশের শত্রু থাকে; সেই ভারত বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারে না।
যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত পাশাপাশি রাষ্ট্র। আমরা বলেছি, ভারত বন্ধু রাষ্ট্র। কিন্তু সেখানে আমাদের সহকারী হাইকমিশনে হামলা হয়েছে, পতাকা পুড়িয়েছে। সীমান্তে আমাদের দেশের নাগরিকদের গুলি করে মারছে, ফেলানিকে হত্যা করে কাঁটাতারে ঝুঁলিয়ে রাখে। এটা কোনো বন্ধু রাষ্ট্রের কাজ হতে পারে না।
তিনি বলেন, ভারত একটি আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র। ভারতের আশীর্বাদে এদেশে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখন হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আগরতলা সীমান্ত থেকে ১০০ মিটার দূরে স্থলবন্দর মাঠে আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না বলেন, বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত স্বাধীনচেতা জাতি। আমরা বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ। ভারতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সে দেশের সরকারের। তারা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আর বাংলাদেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে হবে। আমাদের কোনো প্রভু নেই। আমরা ভারতকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে দেখি। আর শেখ হাসিনা সরকারকে ভারত আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। আপনারা ভারতকে বলেন, শেখ হাসিনাসহ তাদের দোসরদের ফিরিয়ে দিতে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান বলেন, দাসত্ব নয়, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য জীবনকে বাজি রাখতে হবে। প্রয়োজনে দেশের সম্মান রক্ষায় আবারও রক্ত দেবো। তবুও দিল্লির দাসত্ব মানবে না এদেশের জনগণ।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, এই লংমার্চ সফল হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে এই লংমার্চ শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারতকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছি, শেখ হাসিনা আপনাদের পৃষ্ঠপোষকতায় হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গুম ও খুন করা হয়েছে। সুতরাং যতই ষড়যন্ত্র করুন না কেন, তা সফল হবে না।
লংমার্চে আরও অংশ নেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল করিম পল, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেক, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জুয়েল, ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. সারোয়ার হোসেন।