দুদিন আগেই টানা দ্বিতীয় সাফ শিরোপা ঘরে তুলেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। এর আগে ২০২২ সালে প্রথম শিরোপা জয় করে নিজেদের জাত চিনিয়েছিলেন বাংলার বাঘিনীরা।সেই দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন। তবে গত বছর ক্যাম্প ছেড়েছেন তিনি। পাড়ি জমিয়েছেন চীনে।
আঁখি দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিলেন তা স্পষ্ট সাফ মিশন শুরুর আগে দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের কথায়। সাফ মিশনের জন্য নেপাল যাওয়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে সাবিনা বলেছিলেন, ‘আঁখি, স্বপ্নাকে মিস করব। তারা থাকলে প্রতিপক্ষ আমাদের নিয়ে ভিন্নভাবে চিন্তা করে। ’
করারই কথা। ২০২২ সাফে আঁখি খাতুনের পারফরম্যান্স নজর কেড়েছিল সকলের। সেই নজকাড়া ফুটবলারই আরও একবার লাল সবুজের জার্সিতে খেলার অপেক্ষায় রয়েছেন। রয়েছেন নিজেকে প্রমাণ করার আরও একটি সুযোগের অপেক্ষায়।
সাফ জয়ের পর ২০২৩ সালে শুরুতে মায়ের অসুস্থতার জন্য ক্যাম্প ছেড়ে বাড়ি যান আঁখি। এরপর চীনে পাড়ি জমান ফুটবল খেলতে। জনশ্রুতি আছে সুইডিশ একটি ক্লাবের প্রস্তাব পেয়েও যেতে না পারায় অভিমানে ক্যাম্প ছাড়েন তিনি। চীনের একটি ক্লাবে খেলে সর্বোচ্চ স্তরের ফুটবলের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখছেন নিয়মিতই। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সাবেক কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটনের পরামর্শ মেনেই চালিয়ে যাচ্ছেন অনুশীলন, মাঠের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত রাখছেন নিজেকে।
এই বছরের মাঝামাঝিতে নাকি বাফুফের নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণের কাছে দেশের হয়ে মাঠে ফেরার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন আঁখি। এখনও বাফুফের কাছ থেকে সাড়া পাননি তিনি। সাড়া পেলে আবারও দলে আসার পরীক্ষায় নামতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তিনি।
আঁখি বলেন, ‘প্রথমেই টানা দ্বিতীয় সাফ শিরোপা জেতায় বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানাই। আমি এই দলের সঙ্গে ছিলাম, যে কারণে আমি খুবই খুশি। কিন্তু এটা এমন নয় যে এখন শিরোপা জেতায় আমি বাফুফে ক্যাম্পে যেতে চাচ্ছি। আসলে এই সাফের কয়েক মাস আগে থেকেই আমি চেয়েছিলাম দলের সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত হতে। কিন্তু কিভাবে কী করব বুঝতে পারছিলাম না। কিরণ ম্যাডামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু উনি হয়ত ব্যস্ততার কারণে জবাব দিতে পারেননি। ’
বর্তমানে আঁখির স্থান নিয়েছেন আফঈদা খন্দকার। ইতোমধ্যেই সকলের আস্থা অর্জন করেছেন তিনি। বিশ্বাসের প্রতিদান দিয়ে দলের ডিফেন্স লাইন আগলে রেখেছেন। দলে স্থান পেতে হলে আঁখিকে কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে এমনটা জানেন তিনি।
আখি বলেন, ‘আমি ওর খেলা দেখেছি, সে দারুণ খেলে। অনেকেই মনে করে আমি কেবল সংসার নিয়ে আছি। আসলে ব্যাপারটা মোটেও তেমন না। আমি এখানে ট্রেনিং করছি। ক্লাবের হয়ে বেশ কয়েকটি ম্যাচও খেলেছি। জাতীয় দলের হয়ে মাঠে ফেরার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। সুযোগ পেলে শতভাগ নিংড়ে দেব নিজেকে। ’
এছাড়া বাফুফের ক্যাম্পে থাকতে হলে যেসব নিয়ম কানুন আছে সেসবও পুরোপুরি মানার জন্য প্রস্তুত ২১ বছর বয়সি এই ডিফেন্ডার।
দারুণ এক সম্ভাবনাময়ী খেলোয়াড় ছিলেন আঁখি। বাংলাদেশ দলে তিনি থাকাকালীন অন্যতম সেরা খেলায়াড়ই ছিলেন। কোচের আস্থা, বাংলাদেশের রক্ষণের আস্থার প্রতীক ছিলেন আঁখি, এটা একবাক্যে মানবেন অনেকেই। যেমনটা এখনও মানেন কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন।
আখির বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে এক গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘ওর (আখি) বয়স মাত্র ২০-২১, আমি মনে করি ও যদি ফিট থাকে তবে ওর কাছ থেকে বাংলাদেশের এখনও অনেক কিছু নেওয়ার আছে। ’
২০২২ সালে সাফের ওই আসরে বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তার চেয়েও বড় বিষয় ছিল টুর্নামেন্টে কেবল একটি গোল হজম করেছিল বাংলাদেশ; সেটি ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে। সেখানে বড় অবদান নিঃসন্দেহে গোলরক্ষক রূপনা চাকমার। তবে তার সামনে রক্ষণের সেনানী হয়েছিলেন আঁখি খাতুন।
বাফুফেতে এসেছে নতুন কমিটি। অনেক কিছুই বদলে যাচ্ছে। এই বদলের হাওয়ায় বদলে যেতে পারে আঁখির ভাগ্যও। তার জন্য আবারও খুলতে পারে জাতীয় দলের দুয়ার।