পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গুলিতে দুই ছাত্রসহ তিনজনের নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে।
পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র জাহিদুল ইসলামের বাবা মো. দুলাল উদ্দিন মাস্টার বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন।
এতে সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সসহ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাসহ ১০৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে ছাত্রদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার হুকুম দেওয়ার অভিযোগে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান পূর্বের একাধিক হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি আলোচিত চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানকে করা হয়েছে প্রধান আসামি।
গত ৪ আগস্ট বেলা সোয়া ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভে নামে। পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের প্রধান ফটকের সামনে থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা শহরের ট্রাফিক মোড় বর্তমান শহীদ চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে দুই ছাত্রসহ তিনজন নিহত ও অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
ঘটনার সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, ওই গাড়ি থেকে নেমে দুই ব্যক্তি ছাত্রদের লক্ষ্য করে প্রকাশ্যে গুলি ছোড়েন। ঘটনায় নিহত দুইজন হলেন জেলা সদরের চর বলরামপুর গ্রামের দুলাল উদ্দিন মাস্টারের ছেলে ও পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম (১৮) এবং হাজিরহাট বেতেপাড়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ও শহরের সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মাহবুব হাসান নিলয় (১৪)। অপরজন ফাহিম হোসেন রাজ্জাক।
মামলার এজাহারে বাদী জানান, ঘটনার দিন ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসুচি পালন করছিল। এ সময় মামলার অভিযুক্ত আসামিরা লোহার রড, বাঁশের লাঠি ও দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে দাঙ্গা সৃষ্টি করে। বিনা উসকানিতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এতে ছাত্র-জনতা ভয়ে দিকবিদিক ছুটতে থাকে। এ সময় তার ছেলেসহ (জাহিদুল) তিনজন ও অন্য আন্দোলনকারীরা সেখানে অবস্থান করছিলেন। তখন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদের নির্দেশে ছাত্রদের লক্ষ্য করে দুইজন গুলি চালাতে শুরু করে। এতে তার ছেলেসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী বলেন, রাতে বাদী থানায় হাজির হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। আমরা মামলা নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু করেছি। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি গোলাম ফারুক প্রিন্স একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অবস্থান ছিল না। আমরা চেয়েছিলাম ছাত্রদের ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠিত হোক। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি সুযোগসন্ধানীরা যেন পাবনায় কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি না করতে পারে।
সুযোগসন্ধানীরা ৪ আগস্ট ছাত্রদের মধ্যে ঢুকে সহিংসতা চালায় উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও দলীয় অফিস ভাঙচুরের চেষ্টা শুরু হয়। এ সময় পুলিশও নেতা-কর্মীদের রক্ষায় ব্যর্থ হয়। পরে আত্মরক্ষার্থে দলীয় নেতা-কর্মীরা তাদের লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।