এনজিওগ্রাম একটি পরীক্ষা পদ্ধতি। এটা কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি না। এনজিওগ্রাম করে জানা যায় রোগীর হার্টের চিকিৎসা কোনভাবে হবে। এটা কি ওষুধে সারবে নাকি রিং বা বাইপাস সার্জারি লাগবে। তাই হার্টের রোগীদের ক্ষেত্রে বা যারা সন্দেহ করছেন হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে এনজিওগ্রাম একটি জরুরি পরীক্ষা পদ্ধতি।
এনজিওগ্রাম করার আগে রোগী বা রোগীকে দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে এনজিওগ্রামের প্রক্রিয়া সম্পর্কে সংক্ষেপে জানানো হয়। তারপর তাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে সম্মতি নেয়া হয়।
এরপর রোগীকে এক্স-রে টেবিলে, সাধারণত চিত হয়ে শুতে বলা হয়। এরপর কার্ডিওলজিস্ট রোগীকে ঘুমের ওষুধ বা ব্যথা কমানোর ওষুধ দেয়ার জন্য হাতের বাহুর শিরায় ইনজেকশন দেন। এ সময় রোগীর বুকে ও আঙুলে মনিটরিং ডিভাইস লাগিয়ে রাখা হতে পারে এবং আপনার নাকে ছোট ছোট নল লাগিয়ে অক্সিজেনও দেয়া হতে পারে।
এরপর ঠিক যে জায়গাটায় ইনসার্সন হবে, সম্ভবত হাতের বাহুতে বা কুঁচকিতে, সেখানকার ত্বক অ্যান্টিসেপ্টিক দিয়ে পরিষ্কার করা হবে। তারপর রোগীর বাকি শরীর থিয়েটার টাওয়েল দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। লোকাল অ্যানেস্থেটিক প্রয়োগের জন্য ত্বক ও আর্টারির ডিপ টিস্যুগুলো অবশ হয়ে যেতে পারে। এরপর আর্টারিতে একটা সুই ফোটানো হয়। কার্ডিওলজিস্ট যখন নিশ্চিত হবেন যে তা ঠিকমতো বসানো হয়েছে, তখন সুচের মধ্য দিয়ে আর্টারিতে একটা গাইড ওয়্যার বসানো হবে। তারপর সুচটা সরিয়ে নেয়া হবে এবং ক্যাথেটার নামক পাতলা প্লাস্টিকের টিউব ওয়্যারের ওপরে ও আর্টারিতে রাখা হবে।
ক্যাথেটার ও ওয়্যার ঠিক জায়গায় বসেছে কিনা দেখার জন্য কার্ডিওলজিস্ট এক্স-রে সরঞ্জাম ব্যবহার করেন এবং তারপর ওয়্যার সরিয়ে নেয়া হয়। কার্ডিওলজিস্ট একবার নিশ্চিত হন যে এটি সঠিকভাবে একটি গাইড তারের সুচের মাধ্যমে ধমনিতে রাখা হয়েছে, তারপর সুইটি সরিয়ে নেয়া হয়। এরপর ক্যাথেটার নামক একটি সূক্ষ্ম প্লাস্টিকের নলকে তারের ওপরে এবং ধমনিতে রেখে দেয়া হয়।
এরপর ক্যাথেটারের মধ্য দিয়ে একটা স্পেশ্যাল ডাই, কনট্রাস্ট মিডিয়াম, ইনজেক্ট করা হয় এবং এক্স-রে নেয়া হয়। এক্স-রে ইমেজে এ ডাইকে সহজেই দেখা যায়। এরপর এ ডাই রোগীর রক্তনালির মধ্য দিয়ে যেতে থাকে, ডাক্তার তখন এ প্রবাহের দিকে খেয়াল রেখে শনাক্ত করেন যে কোনো ব্লকেজ বা কোনো জায়গা সংকুচিত হয়ে আছে কিনা।
রোগীর এনজিওগ্রামের সময় ডাক্তার যা দেখতে পান, তার ভিত্তিতে ওই একই সময়ে আপনাকে হয়তো অতিরিক্ত ক্যাথেটার প্রসিডিওরের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যেমন সংকীর্ণ আর্টারি খোলার জন্য বেলুন এনজিওপ্লাস্টি বা স্টেন্ট প্লেসমেন্ট। কার্ডিওলজিস্ট যখন বলবেন যে এক্স-রে করে রেজাল্ট ঠিকমতো পাওয়া গেছে এবং রোগী থেকে প্রয়োজনীয় সব তথ্য নেয়া হয়ে গেছে, তখন ক্যাথেটার খুলে নেয়া হয়।
রোগীর এনজিওগ্রাম রিপোর্ট করে ডাক্তার কী কী ফলাফল পেলেন তার ওপর নির্ভর করে রোগীর একই সময়ে অতিরিক্ত ক্যাথেটার পদ্ধতি থাকতে পারে, যেমন একটি বেলুন এনজিওপ্লাস্টি বা সংকীর্ণ ধমনি খোলার জন্য স্টেন্ট প্লেসমেন্ট। একবার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এক্স-রের ফলাফল এবং সব তথ্যের প্রয়োজন রোগীর থেকে পেয়ে গেলে তখন মূত্র নিষ্কাশন যন্ত্র সরানো হয়।
এনজিওগ্রামে কত সময় লাগে? এ কাজে প্রতিটি রোগীর ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা সময় প্রয়োজন হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি কতটা জটিল বা কতখানি সোজাসাপ্টা হবে তা ধারণা করা সবসময় সহজ হয় না। কখনো কখনো পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। প্রসিডিওরের লোকেশন অনুযায়ী, যেমন পায়ে বড় আর্টারি ব্যবহার করা হলে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা লাগতে পারে এবং ছোট আর্টারি ব্যবহার করলে তা বেশি জটিল হয় এবং সময়ও লাগে বেশি। এক্স-রে কক্ষে সব মিলিয়ে ২ ঘণ্টা থাকতে হতে পারে।