শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন সড়কে ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতিতে পুরোপুরি বিশৃঙ্খল হয়ে যায় গণপরিবহন চলাচল।
ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতে সড়কে ভেঙে পড়া ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে স্থানীয় জনতা। শিক্ষার্থী-স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতায় চলছে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা।
বিশৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থা সড়ক নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি দ্রুত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
সরেজমিনে মিরপুর, ফার্মগেট, শাহবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, ছোট বড় প্রায় সব সড়কেই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছায় কাজ করে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
কেউ ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করলেই চালকদের আটকে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা সাধারণ মানুষকে রাস্তা পারাপারে সহায়তা, পথচারীদের ফুটপাত ব্যবহার, চালকদের সিট বেল্ট পড়তে উৎসাহিত করছেন। হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল আরোহীদের আটকে রাখতেও দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
এছাড়াও শিক্ষার্থীরা ছোট হ্যান্ড মাইকে চালক এবং পথচারীদের নানা দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। আবার কোনো গাড়ি সন্দেহজনক মনে হলে তল্লাশিও করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের এ চেষ্টাকে সাধুবাদ জানাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা দেয়ালে, মেট্রোরেলের পিলারে বিভিন্ন প্রতিবাদী দেয়াল চিত্রও ফুটিয়ে তুলতে দেখা যায়।
রাজধানীর শ্যাওড়াপাড়া এলাকায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শাহরিয়ার আরাফাত নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা ট্রাফিক পুলিশের মতো প্রশিক্ষিত না, তারপরেও আমরা নিজেদের মতো ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছি। অনেকেই আমাদের কাজের প্রশংসা করছে। আবার কেউ এটাকে ভালোভাবে দেখছে না, তাদের কথা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ আমরা কেন করছি। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বহিরাগত কিছু মানুষও এ কাজে যোগ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, কতদিন আমাদের এভাবে কাজ করতে হবে জানি না। তবে যতদিন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি ঠিক না হয়, আমরা ততদিন কাজ করে যাবো।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। যে যার সাধ্যমতো শিক্ষার্থীদের পানি, জুস কিংবা খাবার দিয়ে উৎসাহিত করছেন।
দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও, তালতলা শেওড়াপাড়া এলাকায় খাবারের প্যাকেট ও পানি বিতরণ করেছেন টু-এইড ফাউন্ডেশনের আবু তালেব।
তিনি বলেন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা শিক্ষার্থীদের প্রথম দিন থেকেই আমরা প্রতিদিন ২০০ প্যাকেটের বেশি খাবার বিতরণ করছি। শিক্ষার্থীরা যে পরিশ্রম করছে আমাদের জন্য, তাদের প্রতি আমাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে, সেই কারণেই আমরা এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান বলেন, ট্রাফিক পুলিশ ছাড়া একটি রাজধানী চলতে পারে না। অনেক সড়কে শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। এটা ভালো উদ্যোগ। তবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশিক্ষণের দরকার হয়। এটা শিক্ষার্থীদের নেই। যত দ্রুত সম্ভব ট্রাফিক ব্যবস্থা ঠিক করার পরামর্শও দেন তিনি।
বুয়েটের অধ্যাপক এবং দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সাবেক পরিচালক হাদিউজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ট্রাফিক পুলিশের অবর্তমানে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগকে আমাদের সাধুবাদ জানাতেই হবে। তারা যদি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যুক্ত না হতো তাহলে রাস্তাঘাটে বিশৃঙ্খলা, যানজট ব্যাপকহারে বেড়ে যেতো।
তিনি বলেন, বলা হচ্ছে তাদের প্রশিক্ষণ নেই, কিন্তু সিগন্যাল মেইনটেইনের বড় বিষয় হচ্ছে, বিভিন্ন মুখী পরিবহন পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে ছাড়া হচ্ছে কি না, শিক্ষার্থীরা সেই কাজটা সঠিকভাবেই করছে। আমাদের দেশের চালকদের কিছু বদ অভ্যাস হয়ে গেছে, রাতারাতি এ অভ্যাস কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। শিক্ষার্থীরা যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, সেটা মেনেও যদি আমাদের চালকরা যানবাহন চালায়, পাশাপাশি এ প্রক্রিয়া ধরে রাখতে পারি আমরা ভালো একটা ফলাফল পাবো।
শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে বুয়েটের এ অধ্যাপক আরও বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বড় অঙ্কের বিনিয়োগ না করেও শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনা ঠিক করে যে ৩০ শতাংশ যানজটের প্রকোপ কমানো যায়, শিক্ষার্থীরা সেটা করে দেখিয়েছেন। আমাদের ধারাবাহিকভাবে এটা ধরে রাখতে হবে।