রাজধানীর মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংক টাওয়ার। এর নিচে নতুন পৃথিবীর অন্বেষায় দুহাত প্রসারিত করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাস্যোজ্জ্বল ছবিটি আবারও ফিরে এসেছে।তার ওপরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে অনিন্দ্যসুন্দর স্থাপত্যশৈলীর টাওয়ারটি। এতদিন যা ছিল অদৃশ্য এক বন্ধনে অবরুদ্ধ।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) সকালে মিরপুর-২ নম্বর এলাকার মিরপুরে সড়কের পাশে গ্রামীণ ব্যাংক টাওয়ারের সামনে দেখা যায়, অন্য সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মতোই কার্যালয়টি কোলাহলমুক্ত। প্রধান ফটক পার হয়েই বাম দিকে নিরাপত্তাকর্মীরা বসে আছেন। আগের রাতে এই গ্রামীণ ব্যাংক ও সামাজিক ব্যবসার রূপকার ড. ইউনূস দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে শপথ নিয়েছেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আনন্দ বিরাজ করছে। সাপ্তাহিক ছুটির কারণে লোকজন নেই। নিরাপত্তাকর্মীরা বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সদর গেটে জড়ো হয়ে খোশগল্প করছেন।
একজন নিরাপত্তাকর্মী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগের দিন থেকেই চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে এম সাইফুল মজিদ অফিসে আসেননি। রোববার (৪ আগস্ট) মিরপুর গোল চত্বরে প্রথমে আওয়ামী লীগ ও বিকেলে ছাত্র-জনতা অবরোধ করে রাখার কারণে তিনি অফিসে আসতে পারেননি। পরের দিন ৫ আগস্ট সরকারের পতন হলে গ্রামীণ ব্যাংকের গাড়ি ফেরত দিয়ে আর অফিসে আসেননি তিনি। সরকার নিয়োজিত অন্য কর্মকর্তারাও আর অফিস করছেন না।
চেয়ারম্যানের অফিসের তিনজন স্টাফ মারফু, মামুন ও মিজান অফিস করতেন। অফিসেই থাকতেন। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের দিনই বিকেলে বাইরে আনন্দ মিছিল হলে তারা বেরিয়ে যান। তারাও আর আসেননি অফিসে।
শেখ হাসিনার সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০০৯ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বয়স নিয়ে আলোচনা উঠলে এক পর্যায়ে বিষয়টি উচ্চ আদালতে গড়ায়। এ নিয়ে ড. ইউনূসের আবেদনটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১২ সালের ৫ মে খারিজ করে দেয়। ওই বছরের ১২ মে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সে সময় ড. ইউনূসকে তারই প্রতিষ্ঠা করা প্রান্তিক মানুষের ক্ষুদ্র বিনিয়োগ ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরির এক অনবদ্য সূতিকার হিসাবে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান থেকে চলে যেতে হয়। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। বলা হয়, রাজনৈতিক আক্রোশের বশবর্তী হয়ে ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বিতাড়িত করা হয়।
এরপর গ্রামীণ ব্যাংক থেকে একজনকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর সরকার দুইজন পরিচালকসহ চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়। বাকি ৯ শেয়ার হোল্ডার সদস্য পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। সর্বশেষ সরকার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয় প্রফেসর ড. এ কে এম সাইফুল মজিদকে। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন নূর মোহাম্মদ।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে চেয়ারম্যান আর অফিস করছেন না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
পরিবর্তনের হাওয়া এখন গ্রামীণ ব্যাংক টাওয়ারেও। টাওয়ারের বাইরে প্রধান ফটকের পাশের দেওয়ালে ফিরে এসেছে গ্রামীণ ব্যাংকের স্বপ্নদ্রষ্টা ড. ইউনূসের দুহাত প্রসারিত ছবিটি। যা কয়েক বছর আগেও ছিল। তারপর এক সময় পানিতে ভিজে-রোদে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। নতুন করে আর ছবিটা লাগানো হয়নি। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আবার সেই দেয়ালসমান ছবিটা গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মীরা লাগিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হয়ে তিনি যেন তার স্বপ্নসাধনার সূতিগারটিতে ফিরে এসেছেন।