কাজের জায়গা যখন বাড়িতে

কাজের জায়গা যখন বাড়িতে

নানা কারণে অনেক সময় বাসায়ই আমাদের অফিস করার দরকার হয়ে পড়ে। কাজের পরিবেশ পেতে অনেকে এ জন্য বাড়িতেই তৈরি করে নেন একটি স্টাডি রুম, নিদেন একটি স্টাডি কর্নার। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রয়োজনে সেখানে অফিসের কাজও করা যায়, কাটানো যায় একান্ত কিছু সময়। ঠিক কেমন হবে বাসার ভেতরের এ কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ? আলাদা জায়গা না থাকলেই–বা কী করা যায়? পরামর্শ দিয়েছেন সৃষ্টি আর্কিটেকচার অ্যান্ড কনসালট্যান্সির প্রতিষ্ঠাতা, স্থপতি তাসনিম তূর্যি।

জানালার সঙ্গে টেবিল

বাসায় স্টাডি রুমের জন্য আলাদা ঘর থাকুক কিংবা না থাকুক, শোবার কিংবা বসার ঘরে তৈরি করে নিতে পারেন অফিসের কাজ কিংবা পড়াশোনা করার উপযোগী একটুকরা জায়গা। এ জন্য প্রথমেই দরকার একটি টেবিল। জানালার পাশে কিংবা সামনে টেবিল রাখার পরামর্শ দিলেন স্থপতি তূর্যি। তিনি বলেন, এতে দিনের বেলা আলাদা কোনো আলোর উৎসের দরকার হবে না। বাতাসও মিলবে পর্যাপ্ত।

ভিন্ন ভিন্ন আলোর উৎস

টেবিলের ওপর একটি ল্যাম্প রাখলে সেটা একজনের উপকারে আসে। ঘরে থাকা অন্যরা এতে পর্যাপ্ত আলোর সংকটে পড়তে পারেন। তাই এক ঘরেই ভিন্ন ভিন্ন আলোর উৎস রাখা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ল্যাম্পশেডের পাশাপাশি ফোকাস লাইট, স্ট্যান্ডিং ল্যাম্প, ফলিং ল্যাম্প ছাড়াও নানা ধরনের বাতি ব্যবহার করতে পারেন। এতে একের অধিক মানুষ একসঙ্গে কাজ করতে পারবে, ঘরও দেখাবে বেশ সুন্দর। তাসনিম তূর্যি বলেন, টেবিলে একটি ছোট ফোকাস ল্যাম্প রাখুন। দীর্ঘ সময় কাজের ক্ষেত্রে হলুদ আলোর চেয়ে শীতল সাদা আলো মনোযোগ ধরে রাখতে পারে বেশি।

প্রশান্তি আনবে সবুজ

শান্তি ও সৌন্দর্যের জন্য গাছের বিকল্প নেই। স্টাডি রুম বা স্টাডি কর্নারে বিভিন্ন অন্দর গাছ যেমন, মানিপ্ল্যান্ট, মনস্টেরা, লাকিব্যাম্বু, ফিনিক্স পাম ইত্যাদি সাজিয়ে রাখতে পারেন। খুব কম যত্নেই ভালো থাকে এসব গাছ। টেবিলের ওপর ছোট টব বা মগে লাগাতে পারবেন রয়্যাল ফার্ন, স্পাইডার প্ল্যান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট, সিলভার কুইন ইত্যাদি ছোট আকারের গাছ। জানালার পাশে দেয়ালেও বেত বা চটের পাত্র ঝুলিয়ে গাছ সাজাতে পারেন। ঘরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলোর ব্যবস্থা থাকলে ফুলগাছও রাখতে পারেন। চোখের প্রশান্তির সঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে ঘর ঠান্ডা রাখতেও এসব গাছের জুড়ি নেই।

বিশ্রামের জন্য আলাদা জায়গা

স্টাডি রুমে আরামদায়ক দুটি সোফা বা একটি ডিভান রাখুন। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে একটি মাঝারি আকারের বিন ব্যাগ রাখতে পারেন, যেন দীর্ঘ সময় কাজ করতে হলে মাঝেমধ্যে সেখানে বসে খানিকটা বিশ্রাম নেওয়া যায়।

ফোল্ডেবল ক্যাম্প টেবিল

আজকাল অনেকেই বিছানায় বসে কিংবা আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপে কাজ করার জন্য দুদিকে পায়াসহ ভাঁজ করা যায় এমন ছোট আকারের টেবিল কেনেন। স্থপতি তাসনিম তূর্যি বলেন, দীর্ঘ সময় কাজের জন্য এ ধরনের টেবিল ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। এতে কোমর ও ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। তাই বাসায় বসে অফিসের কাজ করার ক্ষেত্রে এ ধরনের টেবিল ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। তবে কাজ কিংবা পড়াশোনার ফাঁকে চা-কফি পানের সময় এ ধরনের টেবিল ব্যবহার করা যেতে পারে। বিভিন্ন অনলাইন পেজ ছাড়াও বাজারে প্লাস্টিক ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন আকারের এসব টেবিলের দাম ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা।

বিছিয়ে নিন শতরঞ্জি

শতরঞ্জি যেন ঘরের আবহই বদলে দেয়। আর তা যদি হয় পছন্দসই নকশা ও রঙের তাহলে তো কথাই নেই। বাজারে সুতা, উল, কাপড় ইত্যাদির তৈরি নানা আকার ও ধরনের শতরঞ্জি পাওয়া যায়। এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে হাতের নাগালের মধ্যেই কিনতে পারবেন ঘরের জন্য সঠিক আকারের পছন্দসই শতরঞ্জি।

দেয়াল হবে হালকা রঙের

সাদা, ছাই, ধূসর কিংবা বাদামি ইত্যাদি হালকা রং বেছে নিন। কেননা, হালকা রঙে ঘর প্রশস্ত দেখায়। তা ছাড়া দেয়ালের গাঢ় রং তাপমাত্রা বেশি শোষণ করে ঘর গরম করে তোলে। তবে ইচ্ছা হলে ঘরের সব দেয়াল হালকা রেখে একটি ইচ্ছেমতো রঙে রঙিন করে তুলতে পারেন। স্থপতি তাসনিম তূর্যি বলেন, বাসার ভেতর কাজের পরিবেশ তৈরি করতে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে নিজের পছন্দ-অপছন্দ। কাজের ধরন বুঝে কাজে প্রেরণাদায়ী জিনিস ঘরে বা ঘরের দেয়ালে সাজিয়ে নিন।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS