দেশের মহাসড়কে যাতায়াতের সময় যাত্রাবিরতির স্থানের রেস্তোরাঁগুলো যাত্রীদের কাছে গলাকাটা দামে সেহরি ও ইফতারসামগ্রী বিক্রি করছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
শনিবার (৩০ মার্চ) সড়ক, রেল ও নৌপথে যাত্রীদের স্বার্থ সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা সংস্থাটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন অভিযোগ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সড়কপথে দূরপাল্লার যাতায়াতে মাঝপথে বাস কোম্পানি কর্তৃক নির্ধারিত বিরতি রেস্টুরেন্টগুলোতে বাসের যাত্রীসাধারণকে সেহরি ও ইফতারি করতে হয়। এতে দেখা যাচ্ছে, ইফতারিতে একটি পেঁয়াজু, একটি বেগুনি, এক পিস জিলাপি, এক থেকে দুটি খেজুর, একটি আলুর চপ, ৫০ গ্রাম মুড়ি, ৫০ গ্রাম ছোলা, একটি ছোট সাইজের কলা অথবা এক পিসের চার ভাগের এক অংশ আপেল, এক গ্লাস শরবত, ২৫০ এমএল এক বোতল পানি সরবরাহ করে থাকে। এসব ইফতারি যেকোনো সাধারণ রেস্টুরেন্ট থেকে কিনতে সাধারণত ৮০ থেকে ৯০ টাকা লাগলেও কুমিল্লা, লোহাগড়া, বগুড়া, সিরাজগঞ্জের যেকোনো হাইওয়ের বিরতি রেস্টুরেন্টগুলোতে এই রকম ইফতারির প্লেটপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা হারে মূল্য আদায় করা হচ্ছে।’
অভিযোগ রয়েছে যেসব কোম্পানির বাস যেসব রেস্টুরেন্টে যাত্রা বিরতি দেয়, ওইসব রেস্টুরেন্টের সঙ্গে বাস কোম্পানির বড় অঙ্কের বাৎসরিক কমিশন বাণিজ্য রয়েছে। এছাড়া বাসের চালক, সুপারভাইজার ও সহকারীসহ কোম্পানির অন্যান্য স্টাফ এসব রেস্টুরেন্টে প্রতিদিন বিনা মূল্যে খাওয়া-দাওয়া করে। এসব কারণে রেস্টুরেন্টগুলো যাত্রীসাধারণের কাছে পরিবেশিত প্রতিটি খাবারের গলাকাটা মূল্য আদায় করছে।’
সেহরিতে পরিবেশিত খাদ্যপণ্যের মূল্যের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সেহরিতে ছোট ছোট পাঁচ পিস গরুর মাংস এসব হোটেলে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তিন পিস মাংস থাকলে এক পিস হাড়, এক পিস চর্বি থাকে।’
‘২৫০ গ্রাম সাইজের এক পিস তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, ২০০ গ্রাম সাইজের রুই ২৫০ টাকা, ২০০ গ্রাম ওজনের দুই পিস পাবদার ২০০ টাকা হারে মূল্য আদায় করা হচ্ছে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘অধিকাংশ রেস্টুরেন্টে কেউ এক প্লেট ভাত খেলেও তিন প্লেট ভাতের বিল আদায়ের অপকৌশল হিসেবে জনপ্রতি ভাতের বিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা হারে আদায় করছে। দেড় কাপের সমপরিমাণ পাতলা ডালের মূল্য ২০ টাকা আদায় করছে, যা (দিয়ে) এক প্লেট ভাত কোনো রকমে ভেজানো যায়।’
রেলপথে খাদ্যপণ্যের বাড়তি মূল্যের অভিযোগ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘এদিকে রেলপথে চলাচলকারী ট্রেনে যাত্রীদের সেহরি ও ইফতারির মূল্য তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি কোচে লাগানো এবং রসিদ প্রদান করে মূল্য আদায়ের নিয়ম লঙ্ঘন করে ইচ্ছেমতো মূল্য আদায় করছেন রেল কর্তৃপক্ষের নিযুক্ত বেসরকারি ইজারাদাররা।’
নৌপথে সেহরি ও ইফতারসামগ্রীর মূল্য নিয়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘নৌপথের বিলাসবহুল লঞ্চের ক্যান্টিনগুলোতে পরিবেশিত সেহরি ও ইফতারির গলাকাটা মূল্য আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ যাত্রীদের সেহরি ও ইফতারির মূল্য নিয়ন্ত্রণে রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।’