বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এতে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা।রোগীদের ভাষ্য, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এখানে চিকিৎসাসেবা মিললেও বিকেল থেকে গোটা রাত পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না কোনো চিকিৎসক। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, বিকল্প ব্যবস্থাপনায় অন্য চিকিৎসকদের দিয়ে তারা ইনডোরের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করছেন।
এদিকে আবহাওয়াজনিত কারণে হঠাৎ চাপ বাড়ায় ওয়ার্ডের বারান্দা ও মেঝেতেও এখন থাকতে বাধ্য হচ্ছেন শত শত রোগী। এ অবস্থা বিরাজ করছে রামেক হাসপাতালজুড়েই।
দেখা গেছে, রোগীদের চাপ বাড়লেও গেল ২৪ মার্চ থেকে বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে রয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা কর্মবিরতিতে থাকায় রামেক হাসপাতালের সাধারণ রোগীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। তাদের ভাষ্য, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে ওয়ার্ডে চিকিৎসক পাওয়াই দায়। কর্মবিরতি শুরুর পর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসক থাকলেও বিকেলে ও রাতে দেখা মিলছে না চিকিৎসকের। এ অবস্থায় চিকিৎসা সেবা দিতে কর্তব্যরত নার্সরাও অসহযোগিতার করছেন।
তবে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, রোজার মাস হওয়ায় রোগীর চাপ একটু কমই আছে। এরপরও তারা বিকল্প ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালু রেখেছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শংকর কে বিশ্বাস জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের টানা কর্মবিরতির কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে ঠিক। তবে সেবা কার্যক্রম বন্ধ নেই। মিড লেভেলের চিকিৎসকদের দিয়ে ইনডোরে ২৪ ঘণ্টাই চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। অন্য চিকিৎসকরাও রোজ পালা করে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তাই চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তির মাত্রা অনেক কম।
তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ১ হাজার ২শ শয্যার এই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছেন ২ হাজার ২৭৮ জন। আর এমবিবিএস শেষ করে রামেক হাসপাতালে ২১০ ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে ইন্টার্নশিপ করছেন। এছাড়া আগেই এমবিবিএস শেষ করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ না করা আরও প্রায় ৬০ জন চিকিৎসক এফসিপিএস ও এমডিএমএস কোর্স করছেন। বর্তমানে হাসপাতালে কর্মরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ১৫ হাজার টাকা বেতন পান। যা দিয়ে বর্তমান সময়ে চলা খুবই কঠিন ও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সেই কারণে তারা তাদের বেতন-ভাতা আরও ১৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছেন। বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ছাড়াও কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ চার দফা দাবিতে তারা এই কর্মবিরতি পালন করছেন।
আর রামেক হাসপাতালে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ডাকা কর্মবিরতিতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। রোববার (২৪ মার্চ) থেকে এই কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। চলবে ২৮ মার্চ পর্যন্ত। এতে হাসপাতালে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
কর্মবিরতিতে থাকা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অভিযোগ এখানে এফসিপিএস ও এমডিএমএস কোর্সের প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা বেতন-ভাতা পান। তাই তারাও তাদের মাসিক ভাতা বাড়ানোর দাবি তুলেছেন। আর তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে আপাতত ভাতা ২৫ হাজার টাকা করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহীসহ সারা দেশেই কর্মবিরতি পালনের ডাক দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রশ্নে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসক ও কোর্সের প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরাই মূলত প্রতিটি ওয়ার্ডে রোস্টার অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টা ডিউটিতে থাকেন। তারা কর্মবিরতিতে থাকার কারণে কিছু কাজকর্ম তো ব্যাহত হবেই। তবে জুনিয়র প্রভাষক ও মিড লেভেলের চিকিৎসকদের দিয়ে ইনডোরের সেবা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। তাই হাসপাতালে সব সেবা কার্যক্রমই চলছে। তিনি নিজেই বিষয়টি তদারকি করছেন। মধ্যরাত পর্যন্ত হাসপাতালেই থাকছেন। চিকিৎসা কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে কি না তা ঘুরে ঘুরে দেখেছন। তবে রোগীদের কষ্টের কথা বিবেচনায় দাবি আদায়ে কর্মবিরতির মতো এমন কর্মসূচি যথাযথ নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।