জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীমের যৌন হয়রানির অভিযোগ ‘কাল্পনিক’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন।
পরীক্ষায় শূন্য দেওয়ার বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম দাবি করেন, মীম দ্বিতীয় ও সপ্তম সেমিস্টারের ক্লাস করেননি এবং অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেননি।
অন্যদিকে অভিযোগকারী শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীম বলছেন, শিক্ষকরা শূন্য দেওয়া নিয়ে ‘বানোয়াট’ কথা বলছেন।
বুধবার (২০ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর মিন্টু রোডে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন বলেন, ২০১৯ সালে ঘটনা ঘটেছিল- উল্লেখ করে ২০২২ সালে এসে কাল্পনিক একটি অভিযোগ দেয় মীম। এ নিয়ে মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদনের ঘটনায় উচ্চ আদালতে যাওয়া ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার বিষয়ে ডিবি আমাদের ডেকেছে। এ বিষয়ে তারা যা জানতে চেয়েছে। আমরা তথ্য দিয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম বলেন, এখানে দুই ধরনের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে ডিবির হারুন সাহেব আমাদের সঙ্গে কথা বললেন। যৌন হয়রানির বিষয়টি নিয়ে আদালতের কার্যক্রম চলছে। তাই এ নিয়ে আমরা কথা বলতে পারছি না।
মীমের ভাইভা পরীক্ষায় শূন্য পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার একটি নিয়ম আছে। পরীক্ষকরা গোপন একটি খামে সিলগালা করে নম্বরপত্র পাঠান। মীম ঠিকমতো ক্লাসে আসত না। দ্বিতীয় সেমিস্টারের একটি কোর্সে অ্যাসাইনমন্ট ও উপস্থিতি মিলিয়ে ৪০ মার্ক থাকে। সে এর কোনো কার্যক্রমে যোগ দেয়নি, ফলে সে শূন্য পেয়েছে। সপ্তম সেমিস্টারেও চারটি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়নি। ফলে সব মিলিয়ে ২৩ পায়। যেহেতু ৪০ মার্কে পাস, তাই রেজাল্ট শিটে শূন্য এসেছে।
জুনায়েদ আহমেদ হালিম বলেন, মীমের অভিযোগের বিষয়ে ডিবি আমাদের ডেকেছে ক্রস চেক করার জন্য। তারা যা যা জানতে চেয়েছে, আমরা তথ্য দিয়েছি।
এ সময় কাজী ফারজানা মীম উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমি মিডিয়ায় বক্তব্য দেওয়ার কারণে অভিযুক্ত শিক্ষকরা নানা মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছিলেন। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম। এ নিয়ে ডিবিতে অভিযোগ দিয়েছিলাম। আজ তারা এ বিষয়ে অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে ডেকেছিল। ডিবির প্রধান তাদের বলে দিয়েছেন, যেন আমাকে কোনোভাবে হুমকি না দেওয়া হয়।
পরীক্ষায় শূন্য পাওয়ার বিষয়ে মীম বলেন, তারা আমাকে শূন্য দেওয়ার বিষয়ে বানোয়াট কথা বলেছেন। আমি পরীক্ষা দিয়েছি, কিন্তু তারা আমাকে অনুপস্থিত দেখিয়েছেন। এ ঘটনা আমার যৌন হয়রানির অভিযোগেও উল্লেখ করেছি।
দুই শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, দুই পক্ষকে আমরা ডেকেছি। ভুক্তভোগী মীম আমাদের কাছে আবদার করেছেন, তিনি যেন স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারেন। কেউ যেন ডিস্টার্ব না করে। আমরা বিষয়টি শিক্ষকদের বলেছি। তারা বলেছেন, তারা কোনো ডিস্টার্ব করবেন না।
তিনি আরও বলেন, এরপরও যদি কেউ ডিস্টার্ব করে, তাহলে মীমকে বলা হয়েছে, আমাদের ডিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে যেন জানান। তিনি পরে ব্যবস্থা নেবেন।
যৌন হয়রানির বিষয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, এটি আমরা তদন্ত করছি। এর তদন্ত শেষ হয়নি, এ বিষয়ে পরে জানাতে পারব।
শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দেওয়ায় হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ জবির ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীমের।
আতঙ্কিত হয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন ও বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিমের বিরুদ্ধে সোমবার বিকেলে ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ দেন এ শিক্ষার্থী।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগকারী ছাত্রী ও অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়।