স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ টেকসই এবং প্রবৃদ্ধি গতি ধরে রাখতে বাংলাদেশের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে জিএসপি সুবিধা ২০২৯ সালের পরিবর্তে ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাড়াতে আয়ারল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (১৮ মার্চ) গণভবনে ঢাকা সফররত আয়ারল্যান্ডের এন্টারপ্রাইজ, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী সাইমন কোভেনির নেতৃত্বে একটি একটি উচ্চ পর্যায়ের আইরিশ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে তিনি এ সমর্থন চান।
পরে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বৃতি দিয়ে তার স্পিচ রাইটার বলেন, ইইউ যাতে বাংলাদেশের জন্য ব্যবসায়িক সুবিধা, বিশেষ করে জেনারেলাইজড স্কিম অফ প্রেফারেন্স (জিএসপি) সুবিধা ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী আয়ারল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছেন।
আয়ারল্যান্ডকে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অংশীদার উল্লেখ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ইইউ সদস্য দেশ আয়ারল্যান্ড সব সময় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে।
ইইউ প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের স্বার্থের বিষয়ে আয়ারল্যান্ডকে বাংলাদেশকে সমর্থন করার অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা।
আয়ারল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন ভোক্তার একটি সম্ভবনাময় বাজার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তি, ওষুধ এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পের মতো বেশ কয়েকটি খাতে আয়ারল্যান্ডের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের বিশাল সুযোগ রয়েছে।
শ্রম ইস্যু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অসৎ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের শ্রম ইস্যু নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়। এক্ষেত্রে ইইউভুক্ত দেশগুলোর সরকার বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে এ বিষয়ে কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়েছে। এখানে অনেক গ্রিন ইন্ডাস্ট্রিজ রয়েছে।
আয়ারল্যান্ডের মন্ত্রী বলেন, তিনি আয়ারল্যান্ড ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সফরে এসেছেন।
সাইমন কোভেনি বলেন, ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে আয়ারল্যান্ডের প্রথম অনারারি কনস্যুলেট খোলার জন্য তিনি এখানে এসেছেন। এই কার্যালয়টি দুই দেশের জনগণের মধ্যে জনগণের মধ্যে এবং বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সহায়তা করবে।
আইরিস মন্ত্রী বলেন, আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশের প্রযুক্তি ও খাদ্য শিল্পে (কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প) প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে চায়।
তিনি বলেন, আয়ারল্যান্ড জাতিসংঘ ও ইইউ ফোরামে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
বর্তমানে প্রচুর বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আয়ারল্যান্ডে পড়াশোনা করছে উল্লেখ করে সাইমন কোভেনি বলেন, তার দেশে আরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীকে স্বাগত জানাবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আইরিশ মন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে আয়ারল্যান্ড সহায়তা অব্যহত রাখবে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদার, তাদের আয় বর্ধক কাজে নিয়োজিত করা এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী ও আরও উন্নত ঘরের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন সাইমন কোভেনি।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তবে সেখানে হত্যা এবং অন্যান্য অপরাধ কখনও কখনও দেখা যায়। কারণ সেখানে অনেক অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী রয়েছে যারা এখানে দীর্ঘস্থায়ী থাকার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে শরণার্থীদের জন্য স্থায়ী ঘর নির্মাণের নজির নাই। কিন্তু বাংলাদেশ ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গার মানসম্মত আবাসনের ব্যবস্থা করেছে।
তিনি বলেন, বিশ্বে শরণার্থীদের জন্য স্থায়ী ঘর নির্মাণের নজির নেই, তবে ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য বাংলাদেশ মানসম্মত আবাসনের ব্যবস্থা করেছে। যদি তারা সেখানে যায় আমরা সেখানে প্রায় চার লাভ রোহিঙ্গার জন্য আবাসন করতে পারবো।
শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কিছু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বেসরকারি সংস্থা ও কিছু দেশের বিরোধিতার কারণে ভাসানচরে আবাসন প্রকল্পটি সফল হচ্ছে না।
সৌজন্য সাক্ষাতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং ভারতে নিযুক্ত আয়ারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত কেভিন কেলি এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত আয়ারল্যান্ডের অনারারি কনসাল মাসুদ জামিল খান।