শুরুতে শ্রীলঙ্কার তিন উইকেট নিয়ে তাদের চাপে ফেললো বাংলাদেশ। এরপর বড় জুটিতে ম্যাচ হেলে যায় শ্রীলঙ্কার দিকে।কিন্তু ফের উইকেট নিয়ে সফরকারীদের চাপে ফেলে স্বাগতিকরা। তাওহীদ হৃদয়ের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের কল্যাণে পাওয়া রান অবশ্য শেষ অবধি যথেষ্ট হয়নি জয়ে।
শুক্রবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রান করে বাংলাদেশ। ওই রান তাড়া করতে নেমে ৪৭ ওভার ১ বলে জয় পায় সফরকারীরা। প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশ জেতার পর দ্বিতীয়টিতে জিতে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছে তারা।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা একদমই ভালো হয়নি বাংলাদেশের। আগের ম্যাচে ডাক মেরে ফিরেছিলেন লিটন দাস, তিনি ফেরেন এদিনও। স্কয়ার লেগে দুনিথ ভেল্লালগের হাতে ক্যাচ দেন মাদুশাঙ্কার বলে। সবমিলিয়ে শ্রীলঙ্কার এবারের সফরে তিনবার মাদুশাঙ্কার বলে আউট হন লিটন।
এরপর সৌম্য সরকারের সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্তর জুটিতে ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ। ৭২ বলে তাদের ৭৫ রানের জুটি ভাঙে শান্ত ফিরলে। আগে দু দফা বাঁচলেও এবার আর রক্ষা হয়নি। মাদুশাঙ্কার বল ছাড়বেন কি না নিশ্চিত ছিলেন না শান্ত, এর মধ্যেই বল ব্যাট ছুয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিসের গ্লাভসে। ৬ চারে ৩৯ বলে ৪০ রান করেন শান্ত
এদিকে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সৌম্য সরকার। তিনি খেলছিলেন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে। কিন্তু হাসারাঙ্গাকে রিভার্স সুইপ করেন সৌম্য, কিন্তু তার ক্যাচ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ঝাঁপিয়ে ধরেন মাদুশাঙ্কা। ১১ চার ও ১ ছক্কায় ৬৬ বলে ৬৮ রান করেন সৌম্য। হাসারাঙ্গার ওই ওভারেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ স্টাম্পিং হন শূন্য রানে।
দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশকে টেনে তোলার চেষ্টা শুরু করেন মুশফিকুর রহিম, তার সঙ্গী ছিলেন তাওহীদ হৃদয়। কিন্তু ২৮ বলে ২৫ রান করে এলবিডব্লিউ হয়ে যান মুশফিকুর রহিম। ১৮ বলে ১২ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজও ফিরলে চাপ কিছুটা বাড়ে।
পরে তানজিম হাসান সাকিব সঙ্গ দেন তাওহীদ হৃদয়কে। ৬২ বলে ৪৭ রানের জুটি গড়েন তাওহীদ হৃদয়। হাফ সেঞ্চুরি তোলা হৃদয় পরে হাত খুলতে শুরু করেন। শেষ দুই বলে ছক্কা হাঁকানো হৃদয় ১০২ বলে ৯৬ রানে অপরাজিত থাকেন। তার সঙ্গে ইনিংস শেষ করে আসা তাসকিন আহমেদ ১০ বলে ১৮ রান করেন।
রান তাড়ায় নামা শ্রীলঙ্কাও শুরুতে উইকেট হারিয়ে ফেলে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই শরিফুল ইসলামের বলে প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দেন আভিস্কা ফার্নান্দো। পরে আরও দুটি উইকেট তারা হারায় ৪৩ রানের মধ্যে। ষষ্ঠ ওভারে বোলিংয়ে এসেই কুশল মেন্ডিসকে আউট করেন তাসকিন আহমেদ। ১৩ বলে ১৬ রান করে মেন্ডিস ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।
পরের ওভার করতে এসে ৪ বলে ১ রান করা সাদিরা সামারাবিক্রমাকে আউট করেন শরিফুল ইসলাম। কিন্তু এরপরই শক্ত জুটি গড়েন পাথুম নিশাঙ্কা ও চারিথ আশালাঙ্কা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি তুলে নেন ওপেনার নিশাঙ্কা। তাকে ফিরিয়ে ১৮৩ বলে ১৮৫ রানের জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশের হাত থেকে প্রায় ছুটে যাওয়া ম্যাচে যোগান আশার সঞ্চার।
মিরাজকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন নিশাঙ্কা। ১৩ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৩ বলে ১১৪ রান করেন তিনি। পরের ওভারে এসেই তাসকিন আহমেদ ফিরিয়ে দেন আশালাঙ্কাকে। তিনি অবশ্য সেঞ্চুরি ছুতে পারেননি। ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৯৩ বলে ৯১ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন আশালাঙ্কা। শুরুতে আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে সফল হয় বাংলাদেশ।
হুট করে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা। সেটি আরও বাড়িয়ে দেন তানজিম হাসান সাকিব। ১৬ বলে ৯ রান করা জানিথ লিয়াংগেকে ফেরান তিনি। যদিও এরপরও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি বাংলাদেশ। শুরুতে কিছুটা ধরে খেললেও আস্তে আস্তে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।
নিজের প্রথম ১১ বলে ৯ রান করেছিলেন এই ব্যাটার। পরে তানজিম হাসান সাকিবের করা ৪৬তম ওভারের শেষ বলে ছক্কা হাঁকান। পেসারদের ওভার প্রায় শেষদিকে থাকায় ৪৭তম ওভারে তাইজুলকে নিয়ে আসেন শান্ত। তার প্রথম চার বলে একটি চার ও ছক্কা হাঁকান হাসারাঙ্গা।
ওই ওভারেই তিনি আউট হলেও তখন শ্রীলঙ্কার দরকার কেবল ২ রান। উইকেট না নিতে পারায় চাপে রাখতে পারেনি বাংলাদেশও। রানের গতির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার চাপ কখনোই সেভাবে ছিল না লঙ্কানদের। ২৬ বলে ১৫ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন দুনিথ ভেল্লালগে।