বরিশালের জনপ্রিয় শরবত মলিদা

বরিশালের জনপ্রিয় শরবত মলিদা

বরিশাল অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে জনপ্রিয় পানীয় মলিদা’র নামটি সর্বাঙ্গে জড়িয়ে। যদিও আধুনিকতার ছোঁয়ায় বড় কোনো উৎসব ছাড়া মলিদা’র আয়োজন এখন আর দেখা যায় না।তবে একসময় ছিল, যখন ছোট-বড় সব আয়োজনে বিশেষ করে গ্রামগুলোতে নতুন ধান ওঠা থেকে শুরু করে গোটা গরমের সময়ে মলিদা’র আয়োজন হতো বেশ জাঁকজমকভাবে।

জানা গেছে, বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব পার্বণে মলিদা’র চল অনেক পুরোনো হলেও বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই এর সঙ্গে পরিচিত নন। তবে কেউ কেউ এখনও সংস্কৃতি বা ঐতিহ্য ধরে রাখতে ছোট পরিসরে মলিদা খাওয়ানোর আয়োজন করে চলছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক মলিদা তৈরির রেসিপি:

মলিদা তৈরিতে মূলত নতুন পোলাওয়ের চাল, নারিকেল, আদা, লবণ, খাঁটি আঁখের গুড়, খই/মুড়ির প্রয়োজন হয়।  পরিমাণের হিসাব কষলে বড় এক কাপ বাটা পোলাওয়ের চালের সঙ্গে, কিছুটা মুড়ি/খই বাটা, বড় টেবিল চামচ নারিকেল বাটা, চা চামচ আদা বাটার সাথে পরিমাণ মতো আঁখের গুড়, লবণ মিশিয়ে ৩-৪ কাপ পানির সাথে মিশ্রণ

একটি পাত্রে প্রথমে পরিমাণ মতো পোলাওয়ের চাল বাটা, মুড়ি বা খই বাটা, নারিকেল বাটা ও খাঁটি আঁখের গুড় মিশিয়ে হাত দিয়ে কচলে নিন যেন সবগুলো উপাদান একসঙ্গে মিশে যায়। আরেকটি পাত্রে পানি দিয়ে তাতে আগের মিশ্রণগুলো অল্প অল্প করে মিশিয়ে নাড়তে থাকুন, তবে এ মিশ্রণে পানির পাশাপাশি তরল দুধ বা ডাবের পানিও ব্যবহার করেন অনেকে।

এবারে সবগুলো মিশ্রণ ঢালার পর পরিমাণ মতো লবণ ও আদা বাটা দিয়ে ভালো করে নাড়ুন। মিশ্রণ হয়ে গেলে পছন্দমতো গ্লাসে ঢেলে তার ওপর মুড়ি বা খই ছিটিয়ে অল্প নারিকেল বাটা ছিটিয়ে দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন সুস্বাদু মলিদা।

মলিদাকে আরও সুস্বাদু করতে অনেক জায়গাতে চিড়াও মিশানো হয়। আগে মিশ্রণ ও বাটার কাজ শীলপাটা ও ঘুঁটনি দিয়ে করা হতো, তবে এখন চাইলে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে তৈরি করে নিতে পারেন। যদিও চাল বাটার কাজটি শীলপাটায় করলে স্বাদটা অনেক ভালো হবে।

বিভাগের পটুয়াখালী জেলার সন্তান পঞ্চাশোর্ধ্ব অ্যামিলি বেগম বাংলানিউজকে বলেন, মলিদা বরিশাল অঞ্চলের মানুষের কাছে জনপ্রিয় একটি পানীয়। যা শরীরকে খুবই শীতল করে এবং একটি আরামদায়ক ভাব তৈরি করে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি এ খাবারটি সাধারণত নতুন ধান উঠলে কিংবা রমজান ও ঈদ কোরবানিতে খাওয়া হতো। এখন বড় উৎসব ছাড়া এর আয়োজন দেখি না।  

তিনি বলেন, আমার মা তার নানি-দাদির কাছ থেকে মলিদা বানানো শিখেছেন। আমি শিখেছি মায়ের কাছ থেকে আর আমার মেয়ে শিখেছে আমার কাছ থেকে।  আর এই হিসেবেই তো এটি শত বছরের পুরোনো একটি খাবার।  

কালের বিবর্তনে কিছুটা হারিয়ে যেতে বসা এসব খাবার নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বেশি বেশি গ্রামীণ ও উদ্যোক্তা মেলার আয়োজন করা উচিত জানিয়ে নারী উদ্যোক্তা ও বরিশাল নগরের রুপাতলী এলাকার বাসিন্দা লিসা ইউসুফ বলেন, মলিদা এমন একটি জিনিস, যা তৈরির পর নবান্নের মতো আলাদা একটি স্মেল বা ঘ্রাণ আশপাশে ছড়িয়ে পড়বে। এটি স্বাস্থ্যসম্মত, কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। খাওয়ার পর শরীরে অনেকটাই সতেজতা ভাব চলে আসে।  

তিনি বলেন, কোমল পানীয়ের আড়ালে এই ঐতিহ্যবাহী পানীয় যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিষয়গুলো জানতে হবে, ধারণ করতে হবে এবং সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS