ঈদের আগমুহূর্তে আবারও বেড়েছে মুরগি, চিনি, পোলাও চাল ও সেমাইয়ের দাম। এর মধ্যে দুই দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ এবং সোনালি জাতের মুরগি কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে। একই সঙ্গে চিনির দাম কেজিতে আরও পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।
সব ধরনের লাচ্ছা সেমাই কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং পোলাও চাল কেজিতে ৩০ থেকে ৪৫ টাকা বেড়েছে। গতকাল রাজধানীর মালিবাগ, কারওয়ান বাজার ও নাখালপাড়া সমিতির বাজারে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আটা-ময়দার কারণে সেমাইয়ের দাম বেড়েছে। তবে মুরগির দাম বাড়ার পেছনে সরবরাহের ঘাটতিকে দায়ী করছেন তাঁরা।
দুই দিন আগেও ব্রয়লার মুগির দাম ছিল ২০০ টাকার আশপাশে। দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৪৫ থেকে ২৫৫ টাকায়। একইভাবে সোনালি জাতের মুরগি ৩৩০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা দরে।
তবে ডিমের দাম আগের মতোই ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ডজন বিক্রি হচ্ছে। এত দিন গরুর মাংসের কেজি বিক্রি হয়েছে ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে। ঈদ উপলক্ষে কোথাও কোথাও কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
নাখালপাড়ার মায়ের দোয়া স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. হেলাল জানান, হঠাৎ দাম বাড়ার কারণে মুরগি বিক্রি দুই দিন বন্ধ রেখেছি। কাপ্তানবাজারে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। তাহলে খুচরা বিক্রি করতে হবে ২৮০ টাকার ওপরে। এ দামে মুরগি বিক্রি করতে গেলে অনেক ঝুঁকি আছে।
সেমাই-চিনির দোকানে এখন ক্রেতার ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বেশ কয়েক দফা দাম বাড়ানোর পর চিনির আমদানি শুল্ক কমিয়েছে সরকার। তবু চিনির বাজারে স্বস্তি ফেরেনি। সরকার খোলা চিনির দর ১০৪ এবং প্যাকেটজাত ১০৯ টাকা নির্ধারণ করলেও কোথাও এ দরে চিনি মিলছে না। প্রতি কেজি খোলা কিংবা প্যাকেট চিনি কিনতে হলে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। তবে দাম বাড়লেও চিনি সরবরাহে ঘাটতি দেখা গেছে।
গত বছরের তুলনায় এবার সেমাই, পোলাও চাল, কিশমিশ ও বাদাম জাতীয় পণ্যে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। গত বছর বিভিন্ন কোম্পানির ২০০ গ্রাম সেমাইয়ের প্যাকেটের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, যা ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে এবার বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ৪০০ গ্রামের সেমাইয়ের প্যাকেটের দাম ছিল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, যা এ বছর বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা। খোলা রঙিন লাচ্ছা সেমাইয়ের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। গত বছর এ সেমাইর দাম ছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। বাংলা খোলা সেমাই কেজিতে গত বছরের তুলনায় বেশি খরচ করতে হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। এ ধরনের সেমাইয়ের কেজি এখন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।
সেমাই ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে দেশে আটা-ময়দার দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সেমাই তৈরির জন্য ব্যবহৃত ময়দা, তেলসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সেমাইয়ের দামে।
বাংলাদেশের রুটি, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, সেমাই তৈরিতে ব্যবহৃত উপকরণের দাম ৩০ শতাংশের মতো বেড়েছে। এ জন্য সেমাইর দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজারে সুগন্ধি বা পোলাও চালের কোনো অভাব দেখা যায়নি, তবু দাম বেশি। প্যাকেটজাত চালের কেজি ১৫০ থেকে ১৭০ এবং খোলা পোলাও চালের কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর প্যাকেটজাত পোলাও চালের কেজি ছিল ১২০ থেকে ১২৫ এবং খোলা পোলাও চালের কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এ ছাড়া গুঁড়ো দুধেও গত বছরের চেয়ে কেজিতে বেশি খরচ করতে হচ্ছে ১৫০ থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত। এবার ডানো, ফ্রেশ, ডিপ্লোমা, মার্কসসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এক কেজি দুধের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৬০ টাকার মধ্যে।
সরকারি সংস্থা টিসিবি বলছে, এক বছরের তুলনায় চিনির দাম ৪৯ শতাংশ, গুঁড়ো দুধের দাম সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ বেড়েছে।
সবজির দামে তেমন তারতম্য দেখা যায়নি। তবে শসার দাম কিছুটা বেড়েছে। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। রোজার শুরুতে লেবুর দাম বাড়লেও তা বেশিদিন টেকেনি। গরমের কারণে লেবুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আবার লেবুর হালিতে ১০ টাকার মতো বেড়েছে। মানভেদে লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।