প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই নির্বাচনে অনেকে চেয়েছিল হুকুমের দাস কাউকে ক্ষমতায় বসাতে। বাংলাদেশের মানুষ তার জবাব দিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র ছিল। এখনও দেশের ভেতরে-বাইরে ষড়যন্ত্র চলছে।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত বেশি বাধা, তত বেশি জোশ আসে সবার মধ্যে, সেটাই এবারের নির্বাচনে প্রমাণ হলো। চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত, একদিকে খুনিদের চক্রান্ত তো আছেই। এ ছাড়া আমি একটা মুসলিম দেশের মেয়ে পাঁচ পাঁচবার ক্ষমতায়, সেটাও অনেকের পছন্দ নয়।
সরকারপ্রধান বলেন, খালেদা জিয়া বলেছিল, ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আর আমি প্রধানমন্ত্রী দূরে থাক, বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারব না। কিন্তু তার অভিশাপ আমার জন্য আশীর্বাদ হয়ে যায়, আর সেটা তার জন্যই প্রযোজ্য হয়ে যায়।
তিনি বলেন, বিএনপি কিভাবে নির্বাচন করবে। তাদের নেতা সামনে নেতৃত্বে নেই বলে নির্বাচন করতে চায়নি, বানচাল করতে চেয়েছিল। তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিল-মিটিংয়ে আমরা বাধা দেইনি। কিন্তু ২৮ অক্টোবর তাদের আসল রূপ বের হলো।
বিএনপির কার্যালয়ে তালার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তালা ভেঙে তারা (বিএনপি) নিজেদের কার্যালয়ে ঢুকে। তালাটা লাগালো কে? পুলিশ তালা লাগালে তো সিলগালা থাকতো। আমার তো মনে হয় রিজভী সাহেব ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে’ গাইতে গাইতে তালা ভাঙছিল! তালাও বিএনপি নিজেরা দেয়, চাবিও নিজেরা হারায়। আসলে এই নাটকগুলো করে করে মানুষকে কিছুদিনের জন্য ধোকা দেয়া যায়, সবসময়ের জন্য না।
জিনিসপত্রের দাম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন অব্যাহত রাখা ও জিনিসপত্রের দাম যেটা বেড়ে গেছে, সেটা কমানোই আমাদের কাজ। আসলে জিনিসের অভাব নেই, কিন্তু কেউ মনে হয় ইচ্ছা করে দাম বাড়াচ্ছে। সে দিকে আমাদের নজর দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের নতুন কেবিনেট নিয়ে অনেকে বলে খুব তাড়াতাড়ি নাকি হয়েছে! আরে! আমাদের তো সব তৈরি আছে। পিছপা হব কেন? সময় নষ্ট করব কেন? আমাদের সময়ের দাম আছে।
শিগগিরই সংসদ বসবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যত দ্রুত আমরা কাজ করি, ততই তাদের অন্তর্জালা বাড়ে।
এদিকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নবগঠিত মন্ত্রিসভার প্রথম অনানুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিজ বাড়িতে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুরে অনানুষ্ঠানিক এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে, দুপুর ১২টার দিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনার সমাধিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা। এ সময় ৩ বাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়।
এরপর নবগঠিত মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে পবিত্র ফাতেহাপাঠ ও বঙ্গবন্ধুসহ ’৭৫- এর ১৫ আগস্ট নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মোনাজাতে অংশ নেন শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
আজ প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় নিজ বাড়িতে রাত্রিযাপন করবেন। রোববার (১৪ জানুয়ারি) তার অপর নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়ায় যাবেন। এদিন বিকেল ৩টায় কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবেন। সেখানে নেতাকর্মীদের সঙ্গে দুপুরের খাবারও খাবেন শেখ হাসিনা। পরে তিনি সড়ক পথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টিতে জয় পায় আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া স্বতন্ত্রদের মধ্যে বিজয়ী হন ৬২ জন, যাদের মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগই নেতা। আর জাতীয় পার্টি জয় পেয়েছে ১১টি আসনে। দুটিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবং একটিতে জয় পেয়েছে কল্যাণ পার্টি।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গত ৯ জানুয়ারি নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে। গেজেট প্রকাশের পরদিন ১০ জানুয়ারি শপথ নেন নবনির্বাচিত এমপিরা। আর এমপিদের শপথ গ্রহণের একদিন পর ১১ জানুয়ারি শপথ নেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
এই শপথের মধ্যে দিয়েই টানা চতুর্থ মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিল আওয়ামী লীগ। আর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পঞ্চম মেয়াদে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিয়ে ইতিহাস গড়লেন।