ফিলিস্তিনে অবরুদ্ধ গাজার বাসিন্দাদের উচ্ছেদের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বেশ কদিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন চলছিল।
বুধবার (১০ জানুয়ারি) দেশটির সম্প্রচারমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভাষণে নেতানিয়াহুকে ‘গাজা দখল’ করার গুঞ্জন খারিজ করতে দেখা গেছে।
আল জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবর, ফিলিস্তিনে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ‘গাজা দখল করে নেবে ইসরায়েল’ এমন গুঞ্জন শুরু হয়। গত তিন মাস ধরে ইসরায়েলি আচরণও সেদিকে ইঙ্গিত করছিল। কিন্তু বুধবার নেতানিয়াহু বললেন, এমন কিছুই হবে না।
টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে ইহুদি কর্তৃত্ববাদী দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু বিষয় স্পষ্ট করা প্রয়োজন। গাজা উপত্যকা দখলে নেওয়া বা সেখানকার লোকজনকে উচ্ছেদ করার কোনো ইচ্ছা ইসরায়েলের নেই। ইসরায়েলি বাহিনী হামাসকে নির্মূলের লক্ষে গাজায় অভিযান চালাচ্ছে, ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে না।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আন্তর্জাতিক আইন মেনেই অভিযান চালাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন নেতানিয়াহু।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য গাজাকে হামাসমুক্ত করা, সেখান থেকে আমাদের জিম্মিদের উদ্ধার করা। এ লক্ষ্য পূরণ হলে গাজাকে নিরস্ত্র করা ও সেখানকার চরমপন্থার অবসান ঘটানো সম্ভব। এটি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের জনগণকে জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিয়ে আসবে।
যদিও নেতানিয়াহুর দল লিকুদ পার্টির জ্যেষ্ঠ সদস্য এমকে ড্যানি ড্যানন বলেন অন্য কথা। তিনি টাইমস অব ইসরায়েলকে বলেছেন, গাজা উপত্যকায় অভিযান শেষে সেখানকার ফিলিস্তিনিদের অন্য দেশে স্থানান্তরের ইচ্ছা ছিল ইসরায়েলের। শুধু তাই নয়, গাজায় ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের একটি পরিকল্পনাও ছিল তাদের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চাপ প্রয়োগ করায় সে চিন্তা বাদ দিয়েছে সরকার।
এদিকে, গাজা গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শুনানি শুরু করেছে জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলায় স্থানীয় সময় বুধবার সকালে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের ওই আদালতে শুনানি শুরু হয়।
মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য শুনানিতে ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন দেশটির সরকারের মুখপাত্র ইলন লেভি।
গত ২৯ ডিসেম্বর আইসিজেতে মামলাটি দায়ের করে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির দাবি গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের পাশাপাশি গণহত্যা এবং এ সম্পর্কিত অপরাধে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ রয়েছে।
১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশনকে ভিত্তিতে মামলাটি করা হয়েছে। এ সময় আবেদনপত্রের সঙ্গে ৮৪ পৃষ্ঠার একটি নথি সংযুক্ত করা হয়। মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ফিলিস্তিনি জাতির একটি অংশকে ধ্বংস করার উদ্দেশে গাজায় অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।