সঠিকভাবে আইন ও ঘটনা না জেনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সঠিকভাবে আইন ও ঘটনা না জেনে বিদেশিরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। একটি রাজনৈতিক দলের দেওয়া রঙ মাখানো তথ্য মতে বিদেশিরা বক্তব্য দিচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গতকাল সোমবার (১ জানুয়ারি) ঢাকার শ্রম আদালত-৩ এর বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
এরপর আসামিপক্ষ আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করেন। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে ৫ হাজার টাকা বন্ডে এক মাসের জন্য জামিন দেন।
অ্যামনেস্টিসহ বিএনপি, সুশীল সমাজ এ বিচার নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কেন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উনারা যদি ঘটনাটা পড়েন, আইন দেখেন সঠিকভাবে তাহলে এ প্রশ্নটা তুলতেন না। একতরফা শুনছেন। সেটা বিশ্লেষণ না করে ওটার ওপর ভিত্তি করে কথাগুলো বলছেন। উনি (ড. ইউনূস) আইন প্রতিপালন না করায় মামলা হয়েছে। সে মামলা সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত এনেছেন। সেখান থেকে বলছে মামলা চলবে। পরবর্তীতে সাক্ষী প্রমাণ নিয়ে এটা শেষ হয়েছে। এখন বিদেশিরা তো আমাদের দেশের আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আইন পদ্ধতি-প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই। যে কারণে আমাদের এখান থেকে যেটা বলা হয়, সেটা হয়তো ফলো করেন, অনুসরণ করে বক্তব্য দেন। একটা রাজনৈতিক দল, রাষ্ট্র যা করে তারা তার বিরোধিতা করে। সেটা করছে রাজনৈতিক কারণে। তারাই হয়তো বিভিন্ন দেশে এটাকে রঙ মেখে, সঠিক তথ্য না দিয়ে বিভিন্ন দেশের কাছে পাঠাচ্ছেন।
২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণ ছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ শ্রম বিধিমালা ১০৭ বিধি ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। ২০২৩ সালের ৬ জুন আদালত ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
গত ২৪ ডিসেম্বর এ মামলায় উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রাত সোয়া ৮টার দিকে রায়ের জন্য ১ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত। এদিন ঢাকার শ্রম আদালত-৩ এর বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানার দেওয়া রায়ে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায় দেন আদালত।
আসামিদের শ্রম আইনের ৩০৩ (ঙ) ধারায় সর্বোচ্চ ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপরদিকে ৩০৭ ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন আদালত। মামলার অন্য তিন বিবাদী হলেন—গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।
এরপর আসামিপক্ষ আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করেন। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে ৫ হাজার টাকা বন্ডে এক মাসের জন্য জামিন দেন। এ সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘন করে যেসব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, তা বিধি সংশোধন করে সেসব সুবিধা প্রদান করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
ড. ইউনূসের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী খুরশিদ আলম খান উপস্থিত ছিলেন।