আর সিনেমা করবেন না মাহিয়া মাহি?

আর সিনেমা করবেন না মাহিয়া মাহি?

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন রাজশাহী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবার নির্বাচন করছেন দেশের রূপালি পর্দার আলোচিত নায়িকা মাহিয়া মাহি। এরই মধ্যে ট্রাক প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমে হইচই ফেলে দিয়েছেন।তাকে নিয়ে ঘুম হারাম হয়ে গেছে প্রতিদ্বন্দ্বী হেভিওয়েট প্রার্থীরও।  

নৌকার মনোনয়ন চেয়ে পাননি ঠিকই তবে দমে যাননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘুরে দাঁড়ান। তবে এখানেও হোঁচট খান মাহিয়া মাহি।  

এক শতাংশ ভোটারের সই জমাদানের ক্ষেত্রে সইয়ের গরমিলের অভিযোগে সেই মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়। এরপর আপিল করে আবারও সদম্ভে ফিরেন ভোটের মাঠে।

তারপর থেকে এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে যেন সরাসরি যুদ্ধই ঘোষণা করেন। তাকে নিয়ে প্রায় দিনই বিষোদগার করে বক্তব্য দিয়ে থাকছেন খবরের শিরোনামে। আর এরই মধ্যে নতুন ঘোষণা দিয়েছেন, এই ঢাকাই নায়িকা। জানিয়েছেন, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই সিনেমা জগৎকে বিদায় জানাতে চলেছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য গণমাধ্যম না দিলেও গেল কয়েক দিন থেকে এই কথা বলেই ভোট প্রার্থনা করছেন মাহিয়া মাহি। যার একটি ভিডিও আজকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মেও ঘুরে বেড়াচ্ছে।

ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মাহিয়া মাহি ভোটারদের উদ্দেশে বলছেন, ‘আমি মেয়ে হিসেবে আপানাদের (মেয়েদের) ভোট চাই। দেখেন আমার বাচ্চা আছে, সংসার আছে। আমি এখন আপনাদের নিয়েই থাকব। ’

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) গোদাগাড়ীর গোগ্রাম ইউনিয়নে ভোট চাইতে গেলে এক নারী ভোটার চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে বলেন, ‘ভোটের পর নেতারা দেশ ছাড়া হয়ে যায়, এটা আমরা কিন্তু দেখব না! ভোটার আগে যেভাবে মানুষের কাছে যাচ্ছেন, ভোটের পরেও যেন এমনই দেখি। ’

তখন ওই নারী ভোটারের এমন প্রশ্নের জবাবে মাহি বলেন, ‘আমার বাসা মুন্ডমালা। আমি এখানেই থাকব। আমি তো আর সিনেমা করব না। দেখেন আমার বাচ্চা হয়ে গেছে, সংসার আছে। আমি এখন আপনাদের নিয়ে থাকব। ’

এ সময় ওই এলাকায় তাকে ঘিরে ধরা ভোটারদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন এবং উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। এখন থেকে মানুষের কাল্যাণ কাজ করবেন বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানান, এই চিত্রনায়িকা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সমানে রেখে এখন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে প্রতিটি এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন মাহিয়া মাহি। নির্বাচনী প্রচারণায় দিন-রাত এক করে দিয়েছেন তিনি। ভোট চাইছেন ঘরে ঘরে গিয়ে। এতদিন বড়পর্দায় দেখা নায়িকাকে সরাসরি চোখের সামনে দেখতে পেয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ খুবই উচ্ছ্বসিত। বিশেষ করে এই কয়েক দিনেই গ্রামের মেয়েদের যেন মন্ত্রমুগ্ধ করে ফেলেছেন, ঢাকাই সিনেমার গ্লামার্স গার্ল হিসেবে পরিচিত মাহিয়া মাহি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাহিয়া মাহি বলেন, গেল কয়েক বছর ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন তিনি। কিন্তু একটা পর্যায়ে তিনি অনুধাবন করতে পারেন মানুষের জন্য কিছু করতে হলে একটা পাওয়ার প্রয়োজন। আর রাজনীতি করলে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মতই করতে হবে। তাই তার সরাসরি রাজনীতিতে আসার ইচ্ছাই বেশি। আর এলাকার মানুষও তাকে ভালোভাবে গ্রহণ করছেন বলে দাবি করেন মাহি।

তাই গ্রামের নারীদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরও ভোট আদায়ের চেষ্টা করছেন মাহি। বলছেন, নির্বাচিত হলে তিনি নারীদের আত্মমর্যাদা ফিরিয়ে দেবেন। এলাকার মানুষ এখন চৌধুরীর যে শোষণের মধ্যে আছেন, তিনি তা থেকে সবাইকে বের করে আনবেন। তিনি শোষক হিসেবে নয়, সেবক হিসেবে মানুষের পাশে থাকতে চান। সবার সেবা করতে চান।

রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের আরেক স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর মধ্যে লড়াইয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এছাড়া আলোচনায় আছেন- বিএনএমের প্রার্থী শামসুজ্জোহা বাবুও। আর অতিথি প্রার্থী হিসেবে সেখানেই হানা দিয়েছেন মাহি। এই আসনে মাহির আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে দুদিন আগেই আপিলের মাধ্যমে ফিরিছেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সহধর্মিণী আয়শা আক্তার ডালিয়া।

চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির নিজের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে। রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালায় তার নানাবাড়ি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মাহি প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই আসনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে তিনি রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তবে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের গরমিল থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিলের পর প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS