সুদিনের অপেক্ষায় ফেনীর মুদ্রণশিল্প

সুদিনের অপেক্ষায় ফেনীর মুদ্রণশিল্প

বেশ হাঁকডাক দিয়েই বেজে উঠেছে ভোটের বাদ্য। একই সঙ্গে আসছে নতুন বছরও।এ দুই মিলিয়ে ছাপাখানা পাড়ায় ব্যস্ততা বাড়তে যাচ্ছে। দিনরাত এক করে কাজে নেমে পড়তে দেখা যাবে মুদ্রণশিল্পের শ্রমিকদের।  

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে প্রতীক বরাদ্দের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। বরাদ্দের সঙ্গে সঙ্গে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে যাবেন প্রার্থীরা। আর এ কর্মযজ্ঞের অনুষঙ্গ পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন।  

অন্যদিকে বছরের শুরতেই ক্যালেন্ডার, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রকাশনার কাজও শুরু হবে। শীতকালীন ওয়াজ-মাহফিল আর হাট-মাঠের নানা বিজ্ঞাপন-পোস্টার তো আছেই।  

এর মধ্যদিয়ে সারাদেশেই মুদ্রণশিল্পের পালে হাওয়া লাগবে। ব্যতিক্রম নয় ফেনী। নির্বাচন আর নতুন বছরের মৌসুমে এ জেলার মুদ্রণশিল্পে প্রায় তিন কোটি টাকা লেনদেনের আশা ব্যবসায়ীদের।  

ফেনী শহরের বড় বাজারে মুদ্রণশিল্প সংশ্লিষ্ট এলাকায় এখন সুদিনের অপেক্ষা। চলমান হরতাল-অবরোধে ব্যবসায় কিছুটা মন্দা থাকলেও সামনে সুদিন, তা অনুমান করাই যাচ্ছে।  

তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে এখন প্রতীক বরাদ্দের অপেক্ষা। প্রতীক বরাদ্দ হয়ে গেলে বাড়বে পোস্টার-ব্যানারের চাহিদা। ছাপাখানাগুলোতে আগের চেয়ে ব্যস্ততা বাড়বে। এবার ভালো ব্যবসা হবে, এমন আশা করছেন ছাপাখানা পাড়ার বাসিন্দারা।  

কবির আহম্মদ নামে এক শ্রমিক জানান, অন্য সময়ে প্রেস বা ছাপাখানায় কাজ কম থাকলেও বছরের শেষ ও শুরুর সময়টাতে বেশি থাকে। এবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জাতীয় নির্বাচন। প্রতীক বরাদ্দ হলে পোস্টার ছাপানো হবে। সবমিলিয়ে ব্যস্ততা বাড়বে।  

মুদ্রণশিল্পের ঐতিহ্যের জনপদ ফেনীতে রয়েছে ৪২টি ছাপাখানা, সরাসরি মুদ্রণের সঙ্গে জড়িত রয়েছে আরও তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠান, রয়েছে চার শতাধিক গ্রাফিক্স ডিজাইনার ও হাজারখানেক শ্রমিক। এ বৃহৎ জনগোষ্ঠী মুখিয়ে আছে ব্যস্ততার মৌসুমের জন্য।  

নির্বাচন যত বেশি জমবে, ব্যবসা তত ভালো হবে, এমনটাই আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা আশা করছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোটি টাকার পোস্টার, পিভিসি ব্যানার-ফেস্টুন ছাপানো হতে পারে। বিশাল এ কর্মযজ্ঞে আশাবাদী শ্রমিকেরাও।  

এ খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, জেলার ৪৫ ইউনিয়ন ছাড়াও আশপাশের এলাকা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম, নাঙ্গলকোট, খাগড়াছড়ি, রামগড়, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, বসুরহাট ও চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলাসহ প্রায় ১০০টি ইউনিয়নের ছাপার কাজ করেন ফেনীর ছাপাখানার ব্যবসায়ীরা। এ বাজার এখন আরও প্রসারিত হচ্ছে। আসন্ন ছাপার মৌসুমকে কাজে লাগিয়ে কোটি টাকা লেনদেনের আশা করছেন ব্যবসায়ী নেতারাও।  

ফেনী জেলা মুদ্রণশিল্প মালিক সমিতির সভাপতি রাজিব নাথ বলেন, এবার নির্বাচনে প্রার্থী অনেক। প্রার্থীরা যদি পোস্টার ছাপান, তাহলে ছাপাখানায় ব্যবসা বাড়বে। এ ছাড়া  নতুন বছরের মৌসুম তো আছেই।  

সব মিলিয়ে ফেনীর প্রেসপাড়ায় এ মৌসুমে তিন কোটি টাকার ব্যবসার আশা এ ব্যবসায়ী নেতার।  

ভাটির জনপদ ফেনীতে মুদ্রণ শিল্পের সূচনা ঘটে বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকে । ১৯২২ সালে এ জেলায় প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়।  জনপদের বিশিষ্টজনরা এ শিল্পের গোড়াপত্তন করেন। তৎকালীন সমাজপতি ও উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা সম্পৃক্ত ছিলেন এ খাতে। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এখনো টিকে আছে শিল্পটি।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৩
এসএইচডি/আরএইচ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS