দেশে নতুন আতঙ্কের নাম অনলাইন জুয়া। এক ধরনের কৌতূহল থেকে তরুণ প্রজন্ম আকৃষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন জুয়ার সাইটে। পাঁচ-দশ হাজার টাকার বিনিয়োগে শুরু করে লোভে পড়ে একপর্যায়ে খোয়াচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অনেক তরুণ আবার দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে গিয়ে এ জালে নিজেদের জড়াচ্ছেন। টেলিগ্রামে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখছেন। খেলাধুলার বড় ইভেন্ট সামনে এলেও জুয়ার কারবার ধুন্ধুমার হয়ে ওঠে। এখন ক্রিকেট বিশ্বকাপ ঘিরেও অনলাইনকেন্দ্রিক জুয়া জমাট।
জুয়ার এসব সাইটের অধিকাংশ পরিচালনা করা হচ্ছে রাশিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে। বিদেশ থেকে পরিচালিত এসব সাইট পরিচালনা করছে বাংলাদেশের এজেন্টরা। জুয়ায় বিনিয়োগ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে বিদেশে।
অনলাইন জুয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত সাড়ে চার হাজার একাউন্ট বন্ধ করেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না সর্বনাশা জুয়া। গোয়েন্দাদের তথ্য, দেশ থেকে বছরে পাচার হচ্ছে দুইশো কোটি টাকার বেশী। অনুসন্ধানে জানা যায়, অনলাইন জুয়ার এজেন্টদের টার্গেট এখন জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটররা।
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ৬৫ লাখ এর বেশি। বিশ্বে ইউটিউব ব্যবহারকারি ২০০ কোটি। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের টার্গেট করে অনলাইন জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে বাংলায়।
বিদেশে বসে একটি চক্র অনলাইনে জুয়ার বিজ্ঞাপনের কাজ করে। প্রসার বাড়াতে এ কাজে ব্যবহার করা হয় কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জনপ্রিয়তাকে
তথ্যপ্রযুক্তির খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনলাইনে সাইট ব্লক করা সম্ভব হলেও জুয়ার অ্যাপ বন্ধ করা যায় না। গুগল প্লে বা অ্যাপল স্টোর থেকে মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে জুয়া খেলা যায়।
অ্যাপ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে অ্যাপ ব্লক বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ফলে এভাবেই জুয়া থেকেই যাচ্ছে অনলাইনে। এ ছাড়া প্রতি দিনই নতুন নতুন নামে জুয়ার সাইট আসছে অনলাইন দুনিয়ায়। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেই সেগুলো ব্লক করা হচ্ছে। এ জন্য পুরোপুরি অনলাইনকে জুয়ামুক্ত করা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি মোবাইল ফোনে জুয়া খেলার হার বেড়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে রাজধানী ও মফস্বল শহরের সেলুনগুলোতে জুয়া খেলার প্রবণতা বেড়েছে। রাজধানীর মিরপুরের সাড়ে ১১ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের কাছের সেলুনগুলোতে, বিশেষ করে ক্রিকেট খেলা চলাকালে এই জুয়া খেলা হয়।
সাধারণ মানুষের আস্থা পেতে অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপনে সুপরিচিত মুখের অংশগ্রহণ বাড়ানো হয়।
বিটিআরসি জানায়, জুয়ার সাইট বন্ধ করেও সমাধান হচ্ছে না। সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে সাইবার সেল। জুয়ার সর্বগ্রাসি থাবা থেকে বাঁচতে সচেতনতার পাশাপাশি এর ভয়াবহতা সম্পর্কে প্রচার বাড়ানো উচিত বলছেন বিশেষজ্ঞরা।