সামাজিক মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক নারী ‘দ্বিতীয় বয়ঃসন্ধির’ অভিজ্ঞতার কথা বলছেন৷ টিকটকে এটি এখন জনপ্রিয় এক বিষয়৷ কিন্তু ‘দ্বিতীয় বয়ঃসন্ধি’ কি আদৌ বাস্তব?
১৯৩০-এর দশকে ভ্যাসেকটমি অস্ত্রোপচারের পর দ্বিতীয় বয়ঃসন্ধির অভিজ্ঞতা লাভের কথা বলেছিলেন বিখ্যাত কবি ডাব্লিউ বি ইয়েটস৷ ইংরেজি ভাষাভাষীদের মধ্যে সম্ভবত এমন দাবি তিনিই প্রথম করেছিলেন, তবে শেষ নন৷
প্রায় ১০০ বছর পরে এসে দ্বিতীয় বয়ঃসন্ধি বিষয়টি টিকটকে হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডসে রূপ নিয়েছে, প্রায় ছয় কোটি মানুষ তাতে যুক্ত হয়েছেন৷ টিকটকের অনেক ব্যবহারকারী তাদের দ্বিতীয় বয়ঃসন্ধির অভিজ্ঞতার কথা বিনিময় করছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী৷ এই নারীরা তাদের অপ্রত্যাশিত ও ব্যাখ্যাতীত শারীরিক পরিবর্তনের কথা বলছেন৷ কারো পরিবর্তন শরীরের ওজন সংক্রান্ত, কারো ঘটছে ত্বক ও চুলের পরিবর্তনও৷
চিকিৎসাশাস্ত্র কী বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে দ্বিতীয় বয়ঃসন্ধি বলে কিছু নেই৷ মানুষ জীবনে একবারই এই পর্যায়টি অতিক্রম করে৷ তবে হরমোন থেরাপির মধ্য দিয়ে যাওয়া ট্রান্স মানুষেরা এমন কিছু অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন যা দ্বিতীয় বয়ঃসন্ধি ব্যাপারটির হয়ত কাছাকাছি৷
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ইভ ফেইনবার্গ মনে করেন সিসজেন্ডার (জন্মগত লিঙ্গ পরিচয়) নারীদের মধ্যে, বিশোর্ধ নারীদের ক্ষেত্রে সবার অভিন্ন ওজন বৃদ্ধির কোন চিকিৎসাগত ব্যাখ্যা নেই৷ তার মতে যদিও এমনটা ঘটে তার কারণ সম্ভবত লাইফস্টাইল বা জীবনযাপনের পরিবর্তন৷
তিনি বলেন, অনেক সময় মানুষ এই বয়সে জীবনে প্রথমবারের মতো একা থাকতে শেখে৷ খাওয়া-দাওয়া করে, পান করে এবং কম ব্যায়াম করে জীবনকে উপভোগ করে৷
সামাজিক মাধ্যমে নারীরা এজন্য হরমোনগত পরিবর্তনকে দায়ী করলেও ফেইনবার্গ সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন৷ তিনি ব্যাখ্যা করেন, যদিও মানুষ ওজন বাড়ার জন্য হরমোনকে দোষারোপ করে, কিন্তু যে হরমোনগুলি সত্যিই দায়ী সেগুলি খাদ্যের সাথে সম্পর্কিত৷
যেমন, ইনসুলিন, ঘেরলিন ও লেপটিন৷ কিন্তু ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের মতো নারী প্রজনন সম্পর্কিত হরমোনের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই৷ একই কথা বলেছেন ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগোর মেটাবলিক মেডিসিনের অধ্যাপক নাভিদ সাত্তার৷ নারীদের ওজন বৃদ্ধির জন্যে তিনিও হরমোন নয়, জীবনযাপনের পরিবর্তনকে দায়ী বলে মনে করেন৷
তিনি জানান, পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় সমবয়সী পুরুষদের চেয়ে নারীদের ওজন বৃদ্ধি বা স্থূল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে৷ বয়সের সাথে সাথে গৃহস্থালি ও পেশাগত কাজ এবং সমবয়সী পুরুষদের চেয়ে কম বাহিরের কাজে যুক্ত হওয়ার কারণে মেয়েরা স্ট্রেস বা মানসিক চাপে থাকে৷ এটি তাদের ওজন বৃদ্ধির একটি কারণ৷
টিকটক ও নারীর স্বাস্থ্য টিকটকে নারীদের ওজন বৃদ্ধির কারণ নিয়ে নানা রকমের আলোচনা চলছে৷ যোগ্যতা না থাকলেও অনেকেই বিশেষজ্ঞ মতামত রাখছেন৷ তার থেকে প্রভাবিত হচ্ছেন অনেকে৷ কিন্তু বিশোর্ধদের ওজন বৃদ্ধির নানা কারণ রয়েছে৷ গর্ভাবস্থার পাশাপাশি, এই বয়সের নারীরা ওজন বৃদ্ধি ঘটে এমন অনেক কিছুর সঙ্গে যুক্ত হন৷ ধূমপান করা, অ্যালকোহল পান, সহবাস, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কিংবা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার; এর সবই এই বয়সে ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে৷
এমনকি কুড়ির পরেও নারীদের বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তনগুলো স্বাভাবিকভাবেই অব্যাহত থাকতে পারে৷ যেমন, সারাজীবনই তাদের স্তনের আকারের পরিবর্তন হতে পারে৷ ওজন বৃদ্ধি নিয়ে ২০২২ সালে ৩৫ বছরের বেশি বয়সী ১৩ হাজার জনের উপর চালানো একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়৷ অংশ নেয়াদের মধ্যে বিগত দশ বছরে কাদের ওজন বেশি বেড়েছে এমন পরীক্ষায় কম বয়সীরা, অর্থাৎ ৩৬ থেকে ৩৯ বছরের নারীরা এগিয়ে ছিলেন৷
যুক্তরাষ্ট্রে চালানো এই পরীক্ষায় শ্বেতাঙ্গ নারীদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গ ও মেক্সিকান অ্যামেরিকান নারীদের স্থূল হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে৷ তবে সব নারীরাই তাদের সমবয়সী পুরুষের চেয়ে বেশি ওজন লাভ করেছেন৷ এই গবেষণায় ৩৬ বছরের নীচের কোন নারীকে নেয়া হয়নি৷
প্রতিবেদনে গবেষকরা বলেছেন, যদি ৩০ বছর বয়সীদের অন্তর্ভুক্ত করা হতো, তাহলে ২০ বছর বয়স থেকে থেকে তাদের ওজন বৃদ্ধির হিসাব নিতে হতো৷ এর সমস্যা হলো ২০ বছরের পরও অনেকের শারীরিক বিকাশ অব্যাহত থাকে৷ এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, দ্বিতীয় বয়ঃসন্ধি বলে বাস্তবে কিছু না থাকলেও বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে নারীদের শারীরিক পরিবর্তন অব্যাহত থাকে৷