ইউরোপে প্রাণিজ ফ্যাট দিয়ে বিমানের জ্বালানি তৈরির উদ্যোগ

ইউরোপে প্রাণিজ ফ্যাট দিয়ে বিমানের জ্বালানি তৈরির উদ্যোগ

পরিবেশ দূষণ কমাতে বিকল্প জ্বালানির সন্ধান সঠিক পদক্ষেপ। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে সেই সীমিত বিকল্পের সন্ধান নতুন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ইউরোপে বিমানের জ্বালানিতে প্রাণিজ ফ্যাট ব্যবহার করতে গিয়ে এমন হয়েছে।

বিমানের ট্যাংকে প্রায় ৯ হাজার মৃত শুকর ভরে প্যারিস থেকে নিউ ইয়র্ক উড়ে যাওয়া কি সম্ভব? এক পরিবেশ সংরক্ষণের হিসেব অনুযায়ী কাগজেকলমে সেটা অবশ্যই সম্ভব। কারণ এই প্রাণীর শরীরে অনেক মেদ রয়েছে, যা দিয়ে বিমানের জ্বালানি তৈরি করা যেতে পারে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নও বিমানের জ্বালানির ট্যাংকে দ্রুত পশুর মেদ দেখতে চায়। ফুয়েল্সইউরোপ সংগঠনের কর্ণধার জন কুপার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, আমরা প্রাণীর মেদ ব্যবহার করি, কারণ কম মানের অ্যানিমাল ফ্যাট সহজেই টেকসই এভিয়েশন ফুয়েল বা ডিজেলে রূপান্তরিত করা যায়। সেই প্রক্রিয়ার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিতে কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে আমরা প্রাণীর ফ্যাট ব্যবহার করতে পারছি।

রায়ান এয়ারের মতো কিছু বিমান সংস্থা প্রাণিজাত জ্বালানি যত দ্রুত সম্ভব কাজে লাগাতে চায়। তবে সেই লক্ষ্যে আলাদা করে পশু জবাই করার প্রয়োজন হবে না। জবাইয়ের সময়ে সৃষ্টি হওয়া বর্জ্য থেকেই ফ্যাট বার করে নেওয়া হবে। বিমানের প্রচলিত জ্বালানির মধ্যেই সেই ফ্যাট মেশানো হবে।

কিন্তু এত বড় কর্মযজ্ঞের অর্থ কী? ইউরোপীয় পরিবহণ ও পরিবেশ সংগঠনের প্রতিনিধি বারবারা স্মাইলাজিচ বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিধির কারণে এভিয়েশন ক্ষেত্রে প্রাণিজ ফ্যাট ব্যবহারের চাহিদা বেড়েই চলেছে। সেই উৎসকেও টেকসই এভিয়েশন ফুয়েল হিসেবে গণ্য করা যায়।

বিমানের ট্যাংকে মৃত প্রাণী কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমাতে সাহায্য করে। ইউরোপে এই ক্ষেত্র এভাবে আরো পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠবে, এমনটা আশা করা হচ্ছে। তবে এতকাল প্রাণিজ ফ্যাটের অন্যান্য ব্যবহারকারীদের জন্য সেটা দুঃসংবাদ। যেমন কসমেটিক ও খাদ্য শিল্প। প্রাণিজ ফ্যাটের অভাব দেখা দেবে বলে এই শিল্পক্ষেত্র আশঙ্কা করছে। শুকর তো আর গাছে ফলে না!

ইউরোপীয় পরিবহণ ও পরিবেশ সংগঠনের প্রতিনিধি স্মাইলাজিচ বলেন, সমস্যা হলো সেই ফ্যাট যত বেশি বায়োফুয়েল উৎপাদনের কাজে লাগানো হবে, এই শিল্পশাখাগুলিকে বিকল্প খুঁজতে ততটাই হয়রান হতে হবে। প্রায়ই বিকল্প হিসেবে ভেজিটেবল অয়েল, বিশেষ করে পাম অয়েল বেছে নিতে হয়। সেটাই সবচেয়ে সস্তার পথ এবং এর বৈশিষ্ট্যও প্রাণিজ ফ্যাটের মতো। কিন্তু তার ফলে আবার অরণ্য নিধন, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য অনেক সমস্যা দেখা দেয়।

পরিবেশ সংরক্ষণকারীদের আশঙ্কা, পাম অয়েলই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হয়ে উঠবে। আরো বেশি পাম অয়েল উৎপাদন করতে হলে প্লান্টেশনের আয়তন বাড়াতে হবে। তখন রেইন ফরেস্টে থাবা বসাতে হবে। ফুয়েল্সইউরোপ সংগঠনের কর্ণধার জন কুপার মনে করেন, ইউরোপীয় কমিশন যে এই সমস্যা সম্পর্কে অবগত, সেটা মনে রাখতে হবে। এভিয়েশন রিফুয়েল সংক্রান্ত বিধিনিয়ম প্রস্তুত হচ্ছে। ইইউ-র নিয়ম অনুযায়ী টেকসই এভিয়েশন ফুয়েলে সর্বোচ্চ তিন শতাংশ প্রাণিজ ফ্যাট ব্যবহার করা যাবে।

ইউরোপীয় পরিবহণ ও পরিবেশ সংগঠনের বারবারা স্মাইলাজিচ বলেন, আমাদের হিসেব অনুযায়ী এর ফলে বাড়তি আরো দশ লাখ টন প্রাণিজ ফ্যাটের প্রয়োজন পড়বে।

ইউরোপকে আরো পরিবেশবান্ধব করে তুলতে বিমানযাত্রা শেষ পর্যন্ত আরো কম করাই অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS