সাত শিশুকে কেন হত্যা করেছিলেন যুক্তরাজ্যের সেই নার্স

সাত শিশুকে কেন হত্যা করেছিলেন যুক্তরাজ্যের সেই নার্স

যুক্তরাজ্যের এক নার্সের বিরুদ্ধে সাত শিশুকে হত্যার অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। শুধু ওই শিশুগুলোই নয়, আরও ছয় শিশুকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তাঁর শিকার সবচেয়ে কমবয়সী শিশুটি ছিল মাত্র এক দিন বয়সী।

ওই নার্সের নাম লুসি লেটবি। ৩৩ বছর বয়সী এই নারী কেন একে একে সাত শিশুকে হত্যা করেছিলেন, তা হয়তো কখনোই পুরোপুরি সামনে আসবে না। তবে ১০ মাস ধরে চলা বিচারের সময় শিশু হত্যাকাণ্ডের কিছু সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরেছেন আইনজীবীরা।

নিজেকে ‘সৃষ্টিকর্তার মতো’ ভাবতে পছন্দ করতেন

এক নারী একসঙ্গে তিন শিশুর জন্ম দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে দুই ছেলে শিশু ছিল লুসির শেষ শিকার। আদালতে তাদের শিশু ‘ও’ ও ‘পি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের জুনে ছুটি কাটিয়ে ফেরার পর শিশু ‘ও’–কে হত্যা করা হয়েছিল। এর এক দিন পরেই শিশু ‘পি’ মারা যায়।

শুনানিতে আইনজীবীরা বলেছেন, লুসি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিলেন। তিনি শিশুদের ক্ষতি করে নিজেকে ‘সৃষ্টিকর্তার মতো’ ভাবতেন। এরপর নিজেই প্রথম সহকর্মীদের কাছে গিয়ে ওই শিশুর শারীরিক অবনতির কথা জানাতেন।

বিচারকদের উদ্দেশে এক আইনজীবীর ভাষ্যটা ছিল এমন, ‘তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ন্ত্রণ করছিলেন, যা ঘটছিল তা থেকে আনন্দ পাচ্ছিলেন। কী ঘটতে পারে, তা আগে থেকেই অনুমান করছিলেন তিনি। নিজেকে সৃষ্টিকর্তার মতো ভাবছিলেন।’

শিশুদের কষ্ট দিয়ে মজা পেতেন

লুসি লেটবিকে দুই দফা গ্রেপ্তার ও মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। ২০২০ সালে তৃতীয়বার গ্রেপ্তারের পর তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আনা হয় এবং পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। লুসির বাড়িতে তল্লাশির সময় হাসপাতালের কিছু কাগজপত্র ও হাতে লেখা একটি চিরকুট পেয়েছে পুলিশ। তাতে লেখা ছিল, ‘আমি ভয়ংকর খারাপ, আমি এটা (হত্যা) করেছি।’

আদালতে শুনানির সময় আইনজীবীরা জানিয়েছেন, শিশুদের কষ্ট দেওয়ার পর মজা পেতেন লুসি। এ ছাড়া বিবাহিত এক চিকিৎসকের সঙ্গে গোপন সম্পর্কও ছিল তাঁর। হাসপাতালে কোনো শিশুর অবস্থা গুরুতর হলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য ডাকা হতো। ওই চিকিৎসককে কাছে পেতেই শিশুদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের অসুস্থ করতেন লুসি। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

২০১৬ সালের জুলাইয়ে লুসিকে হাসপাতালে নবজাতক বিভাগ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আদালতে প্রকাশ করা নথিতে দেখা গেছে, এরপর লুসি ও ওই চিকিৎসক কাজের বাইরে বেশ কয়েকবার দেখা করেছিলেন। এ ছাড়া তাঁরা নিয়মিত ভালোবাসার ইমোজি দিয়ে বার্তা আদান–প্রদান করতেন।

‘শিশুদের পরিচর্যায় আমি অতটা ভালো নই’

আদালতের বিচারকদের কাছে লুসি লেটবির হাতে লেখা কিছু কাগজপত্র তুলে ধরা হয়েছিল। এর একটিতে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি তাদের হত্যা করেছি; কারণ, তাদের পরিচর্যার কাজে আমি অতটা ভালো নই।’ আরেকটি কাগজে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি কখনোই সন্তান নেব না বা বিয়ে করব না। পরিবার কেমন, তা আমি কখনোই জানতে পারব না।’

একঘেয়েমি

নবজাতক বিভাগে সবচেয়ে অসুস্থ শিশুদের নিয়ে কাজ করার প্রশিক্ষণ ছিল লুসি লেটবির। আদালতে তিনি স্বীকার করেছেন, কম যত্নের প্রয়োজন—এমন শিশুর পরিচর্যার দায়িত্ব পেলে তিনি কাজের মধ্যে তেমন আনন্দ পেতেন না।

আদালতে আইনজীবীরা বলেছেন, বিভিন্ন কৌশলে শিশুর ওপর নির্যাতন করতেন লুসি। অনেক সময় তাদের রক্তে বাতাস ও ইনসুলিনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করতেন। বাতাস ঢুকিয়ে দিতেন শিশুদের পরিপাকতন্ত্রে। আবার জোর করে মাত্রাতিরিক্ত দুধ খাওয়াতেন তিনি। লুসি এমনভাবে এ কাজগুলো করতেন যেন, সহকর্মীরা মনে করেন, স্বাভাবিক কারণেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS