সিনহা হত্যা মামলা

সিনহা হত্যা মামলা

কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় কার্যকর চান স্বজনেরা। সন্তানের হত্যাকারীদের ফাঁসির আদেশ কার্যকর হবে—সে আশায় আছেন বৃদ্ধ মা। সিনহার ৬৫ বছর বয়সী মা নাসিমা আক্তার গতকাল রোববার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মরার আগে ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি যেন দেখে যেতে পারি। তার আগে যেন মৃত্যু না হয়।’

সিনহা হত্যার তিন বছর পূর্ণ হয়েছে আজ সোমবার। এ উপলক্ষে কক্সবাজার পাবলিক হলে আজ বেলা তিনটায় এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে উপস্থিত থাকবেন সিনহার বড় বোন ও মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেন।

দেড় বছর আগে বিচারিক আদালতে এই মামলার রায় হয়। এখন আইনি প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ হাইকোর্টে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও আপিল শুনানির অপেক্ষায় আছে এটি।

দেশব্যাপী আলোচিত এই খুনের মামলার রায় হয় গত বছরের ৩১ জানুয়ারি। রায়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত। যাবজ্জীবন পাওয়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন এক উপপরিদর্শকসহ তিন পুলিশ সদস্য ও পুলিশের তিন সোর্স (তথ্যদাতা)।

আদালত সূত্র জানায়, বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলার যাবতীয় নথি গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছায়, যা একটি ক্রমিকে ডেথ রেফারেন্স হিসেবে সংশ্লিষ্ট শাখায় নথিভুক্ত হয়। আইন অনুসারে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকর করতে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে।

এটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। ডেথ রেফারেন্স শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে প্রস্তুত করতে হয় পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত)। এরপর এটি শুনানির জন্য হাইকোর্টের তালিকায় আসবে। সিনহা খুনের এ মামলায় পেপারবুক প্রস্তুতের কাজ চলছে।

সাজা হওয়া মামলার সব আসামি এখনো কারাগারে। গত বৃহস্পতিবার আসামি প্রদীপ কুমার দাশের জামিনের আবেদন করা হয়। তাঁর আইনজীবী সমীর দাশগুপ্ত গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, আদালত প্রদীপের জামিন নামঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে পেপারবুক সম্পর্কে জানতে চাইলে তার প্রস্তুতি চলছে বলে জানানো হয়।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মো. রাশেদ খান। সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পেপারবুক এখনো প্রস্তুত হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা, রায় দ্রুত কার্যকর হোক। রায় কার্যকর হলে কিছুটা হলে আমরা সন্তুষ্ট হব।’

তবে মামলার আসামিরা এখনো কারাগারে থাকায় কিছুটা স্বস্তিতে আছেন বলে জানান শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘সিনহা হত্যা অন্য মামলার মতো নয়। আলোচিত এই মামলার আসামিদের সাজা দ্রুত কার্যকর হওয়া উচিত, যাতে এ ধরনের ঘটনা দেশে আর না ঘটে।’

সিনহার মা নাসিমা আক্তারও আশায় বুক বেঁধে আছেন রায় কার্যকরের। তিনি বলেন, ‘রায় কার্যকর হওয়ার আগে যেন আমার মৃত্যু না হয়। ওপরওয়ালার কাছে শুধু সেই প্রার্থনা করি। রায় কার্যকর দেখে গেলে অন্তত শান্তিতে মরতে পারব।’

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS