মায়ের সঙ্গে ৪ বছরের শিশু কারাগারে, আগে থেকে আছেন বাবাও

মায়ের সঙ্গে ৪ বছরের শিশু কারাগারে, আগে থেকে আছেন বাবাও

পুলিশ পাহারায় কাঠগড়া থেকে মা জেসমিন আক্তারকে হাজতের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় চার বছরের ছোট্ট মেয়ে শিশুটির কান্না থামানো যাচ্ছিল না। দুই হাত এগিয়ে মায়ের কোলে যাওয়ার আকুতি করছিল। সেখানে উপস্থিত ফুফু কবিতা খাতুন শিশুটিকে কোলে তুলে আইনজীবীর কক্ষে নিয়ে গেলেও সামলাতে পারেননি। শেষে মায়ের কোলেই তুলে দিয়েছেন। বর্তমানে শিশুটি মায়ের সঙ্গেই কারাগারে আছে। তার বাবা মিন্টু মিয়া ১৫ দিন ধরে আছেন একই কারাগারে।

এই মা–বাবা আর মেয়ের বাড়ি ঝিনইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায়। আজ সোমবার শিশুটির মা জেসমিন আক্তার (২৮) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এক মামলায় আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই মামলায় জেসমিনের স্বামী মিন্টু মিয়া (৪০) ১২ জুন থেকে কারাগারে আছেন।

আইনজীবীর মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ঘটনার তারিখ উল্লেখ করে ১৫ সেপ্টেম্বর কালীগঞ্জ থানায় ভাটপাড়া গ্রামের জেসমিন আক্তার বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। এই মামলায় পুলিশ তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে আসামি নায়েব আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যায়নি জানিয়ে ওই বছরের ৩০ অক্টোবর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এরপর চলতি বছরের ৩ এপ্রিল আদালত আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন।

মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে নায়েব আলী (৩৫) গত ১৭ এপ্রিল ঝিনাইদহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পূর্বের মামলার জেসমিন আক্তার ও তাঁর স্বামী মিন্টু মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলাটিতে ওই দিনই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

জেসমিন আক্তারের আইনজীবী খন্দকার লিয়াকত জানান, ১১ জুন কালীগঞ্জ থানা পুলিশ জেসমিন আক্তারের স্বামী মিন্টু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। আজ সোমবার জেসমিনকে আদালতে হাজির করে উভয় আসামির জামিন আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করেছেন। জেসমিন আক্তারকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

খন্দকার লিয়াকত বলেন, আসামি দম্পত্তির দুটি শিশু সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে বয়স ছয় বছর। আর ছোট মেয়েটির বয়স ৪ বছর। ছেলেটি তার নানার বাড়িতে আছে। মেয়ে তার মায়ের সঙ্গে এসেছিল। মাকে কারাগারে নেওয়ার সময় মেয়েটি কান্নাকাটি করছিল। তার ফুফু শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এ ছাড়া বাড়িতে এই ছোট্ট শিশুটিকে দেখভাল করার মতো কেউ নেই। এ ছাড়া শিশুটির বাবাও কারাগারে রয়েছেন। তাই আদালতে মায়ের সঙ্গে শিশুটিকে কারাগারে রাখার আবেদন করেন আইনজীবী। আদালত এই আবেদন মঞ্জুর করে মায়ের সঙ্গে শিশুটিকে কারাগারে রাখার অনুমতি দিয়েছেন।

শিশুটির ফুফু কবিতা খাতুন বলেন, তাঁরা তিন ভাই-বোন। মিন্টু মিয়া ছাড়াও পিন্টু মিয়া নামে তাঁর আরেকটি ভাই আছে। পিন্টু পৃথক সংসার করেন। তাঁদের বাবা নজরুল ইসলাম ও মা মনোয়ারা বেগম কুষ্টিয়ার মহিষকুন্ডু এলাকায় থাকেন। তাঁরা সেখানে কাজ করেন। দুই ভাইও অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করেন। মিন্টু মিয়া কৃষিশ্রমিক। তিনি জানান, হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান তাঁরা।

কবিতা খাতুন বলেন, তাঁর ভাবির করা মামলাটি খারিজের পর তাঁর ভাই ও ভাবির নামে যে মামলা হয়েছে সেটা তাঁদের জানা ছিল না। আর মামলা দায়েরের দিনই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। গোটা বিষয়টি তাঁর ভাই না জানার কারণে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁর ভাবি স্বেচ্ছায় হাজির হয়েছেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ইশারত হোসেন বলেন, আসামি জেসমিন আক্তার ও তাঁর স্বামী মিন্টু মিয়া নায়েব আলীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে তাঁকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। যে কারণে তাঁরা বিচার চেয়ে এই মামলা করেছেন। মামলায় আসামিকে কারাগারে দিয়েছেন আদালত। আসামির সঙ্গে অল্প বয়সের বাচ্চা থাকায় আসামিপক্ষের আইনজীবী শিশুটিকেও কারাগারে রাখার আবেদন করেছেন। যে কারণে শিশুটি কারাগারে গেছে।

ঝিনাইদহ আদালতের পিপি ইসমাইল হোসেন জানান, কারাগারে মায়ের সঙ্গেই থাকবে শিশুটি। এভাবে রাখার নিয়ম আছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS