মেয়েদের বয়স যখন দুই কিংবা তিন, তখন স্বামী মারা যান ফজিলার। সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া ফজিলা মেয়েদের এতিমখানায় রেখে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ফজিলা নিখোঁজ হয়ে যান। মেয়েরা তখন কিশোরী। এতিমখানায় থাকতে খবর পান মা হারিয়ে গিয়েছেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর মাকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এরপর কেটে গেছে ২৩ বছর। আজ শুক্রবার আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক সীমান্তের শূন্যরেখায় সেই মায়ের সাক্ষাৎ পেয়েছেন মেয়ে।
বেলা আড়াইটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসেন ফজিলা খাতুন নেছা (৫৫)। ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের সহযোগিতায় ফজিলার সন্ধান পান তাঁর স্বজনেরা। আগরতলায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদ আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তের শূন্যরেখায় নিখোঁজ ফজিলা খাতুনকে মেয়ের কাছে হস্তান্তর করেন। এ সময় মাকে কাছে পেয়ে আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ফজিলা খাতুন নেছা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষখালী গ্রামের খয়বার আলী শেখ ও মোমেনা খাতুনের মেয়ে। স্বামী মো. হোসেন মিয়া বেঁচে নেই। তাঁদের দুই মেয়ে ফিরোজা আক্তার (৩৭) ও পিঞ্জিরা আক্তার (৩৫)। মায়ের সন্ধান পেয়ে আজ সকালে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্টের শূন্যরেখায় হাজির হন ছোট মেয়ে পিঞ্জিরা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী আবদুল হালিম শেখ ও মামাতো ভাই মো. জালাল উদ্দিন।
স্বজন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানসিক ভারসাম্যহীন ফজিলা ২৩ বছর আগে ঝিনাইদহের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। ঘটনাচক্রে কোনোভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পৌঁছে যান তিনি। দুই মেয়েসহ স্বজনেরা অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাঁর সন্ধান পাননি। এভাবে কেটে যায় বহু বছর। অবশেষে আগরতলায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের সহযোগিতায় ফজিলার সন্ধান পেল পরিবার।
ফজিলার মেয়ে পিঞ্জিরা আক্তার বলেন, দুই-তিন বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যান। তখন তাঁদের নিয়ে মা অনেক কষ্টে জীবন যাপন করতেন। একপর্যায়ে তাঁদের একটি এতিমখানায় রেখে অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। একপর্যায়ে মা কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। একদিন এতিমখানায় থাকতে খবর পান, তাঁর মা হারিয়ে গেছেন। তখন তাঁর বয়স ১২। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কোনো সন্ধান না পেয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন, গত বছরের আগস্টে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জানতে পারেন, তাঁদের মা জীবিত আছেন এবং ভারতে আছেন।
ত্রিপুরায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদ বলেন, দীর্ঘ ২৩ বছর পর এক মাকে তাঁর সন্তানের হাতে ফিরিয়ে দিতে পেরে তাঁরা আনন্দিত। মানসিক বিকারগ্রস্ত হওয়ায় ২৩ বছর আগে ঝিনাইদহ থেকে তিনি হারিয়ে যান। ত্রিপুরায় তাঁকে পাওয়া যায়। ত্রিপুরার মডার্ন সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে তিনি বেশ কয়েক বছর চিকিৎসাধীন ছিলেন। কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার পর ত্রিপুরার রাজ্য সরকার বিষয়টি তাঁদের জানায়। কিন্তু তাঁর দেওয়া তথ্য অসম্পূর্ণ থাকায় তারা তাঁর পরিবারের সন্ধান পাচ্ছিল না। তিনি শুধু গ্রামের নাম বিষখালী বলছিলেন। প্রথমে কুষ্টিয়ার বিষখালীতে খোঁজ করা হয়, কিন্তু সেখানে খোঁজ করেও তাঁর পরিবারের তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে ঝিনাইদহের বিষখালী গ্রামে খোঁজ নিয়ে তাঁর পরিবারে সন্ধান পাওয়া যায়। অবশেষে তাঁকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হয়েছে।
মাকে হস্তান্তরের সময় ত্রিপুরায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রথম সচিব মো. রেজাউল হক চৌধুরী, মো. আল আমিন, বিএসএফের আগরতলা আইসিপির কোম্পানি কমান্ডার ধিবেকান দিমান, আখাউড়া ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্টের ইনচার্জ হাসান আহমেদ ভূঁইয়া, বিজিবির আখাউড়া আইসিপির ইনচার্জ মো. শাহ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।