এবার এক থেকে দেড় মণ ওজনের গরুর দাম হাঁকানো হচ্ছে ৮০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
কুষ্টিয়া থেকে ১৩টি গরু নিয়ে এবার চট্টগ্রামের সাগরিকা পশুর হাটে এসেছেন ব্যাপারী আতিয়ার রহমান। সব কটিই দেশি জাতের গরু। এর মধ্যে প্রায় ১০ মণ ওজনের লালুর দাম হাঁকছেন সাড়ে চার লাখ টাকা। আজ শুক্রবার বিকেলে পঞ্চাশোর্ধ্ব এই ব্যাপারী ভেজা কাপড় দিয়ে লালুর গা মুছে দিচ্ছিলেন।
কাজের ফাঁকে আতিয়ার রহমান প্রথম আলোকে জানালেন, আজ ভোরে তিনি হাটে নামেন। দুটি ট্রাকের ভাড়া বাবদ তাঁকে গুনতে হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা। সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি করতে পারেননি। তবে সব কটি গরুই বিক্রি হবে বলে তিনি আশাবাদী।
এখন হাটে অনেকে ঘুরে ঘুরে গরু দেখছেন, দাম জিজ্ঞেস করছেন। কিন্তু কেনার লোক খুবই কম। তাদের কাছে মনে হচ্ছে দাম বেশি। ক্রেতাদের সঙ্গে দ্বিমত করেনি বিক্রেতারাও। তাদের ভাষ্য, গাড়ি ভাড়া বেড়েছে। বেড়েছে সব ধরনের পশুর খাদ্যের দাম। এ কারণে পশুর দামও এবার বাড়তি গুনতে হবে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বাজারে বেশি থাকে। এই দুই ধরনের গরুর দামই বাড়তি।
২৯ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা। সাধারণত ঈদের ১০ দিন আগে চট্টগ্রাম নগরে পশুর হাট বসে। এবার নগরে ৭টি অস্থায়ী ও ৩টি স্থায়ী হাট বসেছে। ৭টি অস্থায়ী পশুর হাটের মধ্যে আছে কর্ণফুলী অস্থায়ী পশু বাজার, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের হোসেন আহম্মদপাড়া-সংলগ্ন টিএসপি মাঠ, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বড় পোলের গোডাউনের মাঠ, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড়, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডের সিডিএ মাটির মাঠ। এ ছাড়া তিনটি স্থায়ী পশুর হাট হচ্ছে সাগরিকা বাজার, বিবিরহাট বাজার ও পোস্তারপাড় ছাগলের হাট।
আজ সাগরিকা ও বিবিরহাট বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে করে গরু, ছাগল ও মহিষ হাটে ঢুকছে। কেউ ১০টি, কেউ ২০টি করে গরু নিয়ে আসছেন। আবার কয়েকজন ব্যাপারী একসঙ্গে ট্রাক ভাড়া করে ছাগল নিয়ে হাটে ঢুকছেন। বিবিরহাটে কথা হয় আনোয়ারার সলিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি চারটি ছাগল নিয়ে এসেছেন। প্রতিটির দাম ধরেছেন ১৫ হাজার করে।
ছুটির দিন হলেও আজকে সাগরিকায় তেমন ক্রেতা ছিল না। উল্টো বিকেলের বৃষ্টি ব্যাপারীদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে। বৃষ্টির কারণে ট্রাক থেকে গরু নামাতে হিমশিম খেতে হয় দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যাপারীদের।
এখন হাটে অনেকে ঘুরে ঘুরে গরু দেখছেন, দাম জিজ্ঞেস করছেন। কিন্তু কেনার লোক খুবই কম। তাদের কাছে মনে হচ্ছে দাম বেশি। ক্রেতাদের সঙ্গে দ্বিমত করেনি বিক্রেতারাও। তাদের ভাষ্য, গাড়ি ভাড়া বেড়েছে। বেড়েছে সব ধরনের পশুর খাদ্যের দাম। এ কারণে পশুর দামও এবার বাড়তি গুনতে হবে।
সাগরিকা ঘুরে দেখা যায়, গরু, ছাগল ও মহিষ সারি করে রাখা হয়েছে ক্রেতাদের জন্য। ব্যাপারীরা কেউ গরু-ছাগলের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত, কেউ আবার খাবার খাইয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আবদুস সালাম গোপালগঞ্জ থেকে ২০টি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। বিকেলে তিনি হাটের ভেতর চেয়ারে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এই ব্যাপারী বলেন, এখন অনেকে ঘুরে ঘুরে গরু দেখছেন, দাম জিজ্ঞেস করছেন। কিন্তু কেনার লোক খুবই কম। হাট জমজমাট হবে আরও দুই দিন পর। এ ছাড়া শহরের মানুষ ঈদের কাছাকাছি সময়ে গরু কেনেন। গত পাঁচ বছর ধরে সাগরিকা এসে তিনি এমনটাই দেখেছেন।
গরু-মহিষ বিক্রি কম হলেও গলের বিক্রি থেমে ছিল না। মো. আরমান দুই দিন আগে সিরাজগঞ্জ থেকে ৪৫টি ছাগল নিয়ে হাটে আসেন। গতকাল ১৬টি বিক্রি হয়ে গেছে।
বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ এমদাদুল হক তাঁর সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন সাগরিকা হাটে। বেশ কয়েকটি গরু তাঁর পছন্দ হয়। কিন্তু দামে না মেলায় কিনতে পারেননি। এমদাদুল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা তিন ভাই মিলে গরু কেনেন। গতবার মাঝারি আকারের গরু কিনেছিলেন ৯৭ হাজার টাকা দিয়ে। ওই একই ধরনের গরু এবার দেড় থেকে দুই লাখ টাকা হাঁকাচ্ছেন ব্যাপারীরা। ফলে এখনো বুঝতে পারছেন না কী করবেন।
ব্যাপারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার এক থেকে দেড় মণ ওজনের গরুর দাম হাঁকানো হচ্ছে ৮০ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। দুই থেকে চার মণ ওজনের গরুর দাম পড়ছে দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকা। পাঁচ মণ ওজনের গরুর দাম বলা হচ্ছে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। ১০ মণ বা তার বেশি ওজনের গরুর দাম চাইছে চার থেকে ছয় লাখ টাকা। একইভাবে বেড়েছে ছাগলের দাম।
আরেক ক্রেতা সুমন আহমেদ বলেন, গরুর পাশাপাশি ছাগলের দামও বেশি চাচ্ছেন ব্যাপারীরা। তিনি বলেন, ‘দাম বাড়তি বলার কারণ জানতে চাইলে ব্যাপারীরা বলছেন, নিলে নেন না নিলে যান।’
দাম বাড়তি বলার কারণ জানতে চাইলে ব্যাপারীরা বলছেন, নিলে নেন না নিলে যান।
সুমন আহমেদ, ক্রেতা
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যাপারী কবীর উদ্দিন ও আবদুস সালাম বলেন, গাড়িভাড়া বেড়েছে। বেড়েছে সব ধরনের পশুর খাদ্যের দাম। এ কারণে পশুর দামও এবার বাড়তি গুনতে হবে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বাজারে বেশি থাকে। এই দুই ধরনের গরুর দামই বাড়তি। ফরিদপুরের ব্যাপারী পরেশ উল্লাহ মণ্ডল বলেন, গত বছর দুই মণ ওজনের একটি গরু তিনি ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন। এবার একই ওজনের গরু দুই লাখ টাকার নিচে ছাড়বেন না।
সাগরিকা হাটের ইজারাদার আশিকুর রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, গতবার যে গরু চার লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার সেটি ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকায় কিনতে হবে। একইভাবে যে গরু দুই লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে গতবার, এবার সেটি আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। গরুর দাম অনেক বাড়তি।
চট্টগ্রাম জেলায় এবার পশুর চাহিদা ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭১৩টি। এর মধ্যে স্থানীয় উৎপাদন প্রায় ৮ লাখ ৪২ হাজার ১৬৫টি। এর মধ্যে গবাদিপশু (গরু) ৫ লাখ ২৬ হাজার ৩২৫, মহিষ ৭১ হাজার ৩৩৩, ছাগল ও ভেড়া ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪০৫টি। এবার ঘাটতি রয়েছে ৩৭ হাজার ৫৪৮টি পশুর। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামের বাইরের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে পশু এনে স্থানীয় ঘাটতি পূরণ করা হয়। ফলে চাহিদা অনুযায়ী পশু পাওয়া যাবে।