পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনায় ক্ষুব্ধ রাজ্যের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র আক্রান্ত হয়েছে। এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন জমা নিয়ে এ পর্যন্ত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে শাসক দল তৃণমূলের কর্মীরা বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেন। তাতেই বাধে সংঘাত।
পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে রাজ্যজুড়ে সহিংস ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস আজ শুক্রবার কড়া ভাষায় বলেছেন, ‘আজ পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রই আক্রান্ত। শয়তানের এই রমরমা চলতে দেওয়া যায় না। যেকোনো মূল্যে এই হিংসা ও মৃত্যু রুখতে হবে।’
সংঘাতের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সহায়তা নেওয়ার নির্দেশ দেন গতকাল বৃহস্পতিবার।
রাজ্যপাল হাইকোর্টের এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন। রাজ্যপাল বলেছেন, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে এই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে। তিনি এই রাজ্যের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই যুদ্ধে ক্ষমতার বিরুদ্ধে ন্যায়ের জয় হবে।
পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন জমা নিয়ে বড় সংঘাত হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙ্গরে। সেখানে সংঘাতে দুজন নিহত হয়েছেন। আজ রাজ্যপাল পরিস্থিতি দেখতে ছুটে যান ভাঙ্গরে। কথা বলেন স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে। এ সময় ভাঙ্গরের ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফের সমর্থক ও প্রার্থীরা দাবি তোলেন, এই ভাঙ্গরে তাঁদের কোনো প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেয়নি শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তাঁরা চান রাজ্যপাল তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য সাংবিধানিকভাবে ব্যবস্থা নিন। রাজ্যপাল ভাঙ্গর কলেজে একান্তে কথাও বলেন তাঁদের সঙ্গে। এরপর রাজ্যপাল তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেন, বিষযটি তিনি দেখবেন।
পরে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ভাঙ্গর কলেজে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেন, ‘এই ভাঙ্গরে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। আমাদের সাংবিধানিকভাবে এই হিংসাকে নির্মূল করতে হবে। গণতন্ত্রের স্বার্থে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে।’
এদিকে আজ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থা ভাঙ্গরের ঘটনা নিয়ে করা এক মামলায় রাজ্য সরকারকে আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে রিপোর্ট তলব করেছেন।
অন্যদিকে অন্য একটি মামলায় বিচারপতি অমৃতা সিনহা বসিরহাটের ৬০ বিজেপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র আজ শুক্রবার গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র তীব্র বাধার মুখে জমা দিতে পারেননি।
অন্যদিকে আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অভিষেকের নবজোয়ার যাত্রার শেষ দিনে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানার ইন্দিরা ময়দানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বলেছেন, ‘বাংলায় এত শান্তিপূর্ণভাবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া এর আগে কখনো হয়নি।’ তাই তো এবার এই রাজ্যে ২ লাখ ৩১ হাজার প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পেরেছেন।
২০১৮ সালের সর্বশেষ পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল এক দফায় ১৪ মে। ওই নির্বাচনের আগেই শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নিয়েছিল ৩৪ শতাংশ আসন। নির্বাচন হয়েছিল ৬৬ শতাংশ আসনে। তবে বিরোধীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলায় গত বছরের মতো এবার তৃণমূল অবাধে একতরফা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি।