আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার ঈদুল আজহা সামনে রেখে বাজারে চাহিদা কম। সরবরাহ মোটামুটি ভালো। তাতে দাম কমছে।
ঈদুল আজহার আগে দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গরমমসলার দাম কমতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবছর ঈদুল আজহার আগে পাইকারি বাজারে বিক্রি বাড়ে। এবার এখন পর্যন্ত বিক্রি কম। অন্যদিকে বাজারে মসলার সরবরাহও মোটামুটি ভালো। তাতে সরবরাহের চাপে দাম কমতির দিকে রয়েছে।
দেশে পাঁচ ধরনের গরমমসলা বেচাকেনা হয়। এগুলো হলো এলাচ, জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ ও গোলমরিচ। এসব মসলা পুরোপুরিই আমদানিনির্ভর। আমদানি কম হওয়ায় ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে মসলার দাম বেড়েছিল। তবে সরবরাহ বাড়তে থাকায় জুনের প্রথম দিক থেকে পাইকারি বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ পাইকারি গরমমসলা ব্যবসায়ী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অমর কান্তি দাশ প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে দেশে মসলার সরবরাহ ভালো। বেচাকেনাও কম। মূলত চাহিদা কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে বেচাকেনায়। তাই জিরা ছাড়া অন্য সব মসলার দাম হয় কমেছে, না হয় স্থিতিশীল রয়েছে। চাহিদা কেন কম জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূলত সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় মানুষ আগের মতো বেশি পণ্য কিনছেন না।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গত মে মাসে গোলমরিচ বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৭২০ টাকায়। গতকাল বৃহস্পতিবারও গোলমরিচ বিক্রি হয় ৬৩০ টাকায়। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে দাম কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ।
গোলমরিচের মতো লবঙ্গ, এলাচি ও দারুচিনির দামও কমেছে ২ থেকে ১১ শতাংশ। গত মে মাসে লবঙ্গ বিক্রি হয়েছিল মান ভেদে প্রতি কেজি ১ হাজার ৪৫০ টাকায়। এখন তা ১ হাজার ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মে মাসে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া দারুচিনির দাম কমে এখন ৩০৫ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এলাচের দামও স্থিতিশীল রয়েছে। মানভেদে প্রতি কেজি এলাচি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। গরমমসলার মধ্যে বাজারে বেড়েছে শুধু জিরার দাম। গত মাসে প্রতি কেজি জিরা ৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। গতকাল সেই দাম বেড়ে হয়েছে ৮৩০ টাকায়। এক মাসের ব্যবধানে জিরার দাম বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশ।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার ঈদুল আজহার আগেই মসলার সরবরাহ মোটামুটি ভালো। শুধু জিরা ও এলাচের আমদানি কিছুটা কম।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত গোলমরিচ আমদানি হয়েছে ১ হাজার ১৩০ টন। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮৯ শতাংশ বেশি। আবার একই সময়ে লবঙ্গ ৯৩৫ টন এবং দারুচিনি ৮ হাজার ৭১০ টন আমদানি হয়।
তবে আমদানি কমেছে জিরা আর এলাচের। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম সাড়ে পাঁচ মাসে এই দুই ধরনের মসলার আমদানি কমেছে যথাক্রমে ২৫ ও ২৭ শতাংশ। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গত বুধবার পর্যন্ত জিরা আমদানি হয়েছে ১৫ হাজার ৬৮৯ টন। এ ছাড়া এলাচ আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৭১১ টন।
চাহিদা না থাকায় খুচরা পর্যায়েও মসলার দামের বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি। গত মে মাস থেকে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের মসলার দামে পরিবর্তন হয়েছে কেবল ২০ থেকে ৫০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে ক্রেতাদের মসলার চাহিদা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ১০০ থেকে ২০০ গ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট, চকবাজার, কাজির দেউড়ি, কর্নেল হাট ও কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে দাম কমলেও তার প্রভাব পড়েনি খুচরায়। খুচরা পর্যায়ে গত দুই মাস ধরে প্রায় একই দরে বেচাকেনা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মসলা। খুচরা বাজারে বর্তমানে প্রতি ১০০ গ্রাম জিরা ৭৫ থেকে ৮০, গোলমরিচ ৭০ থেকে ৮০, দারুচিনি ৪০ থেকে ৫০, লবঙ্গ ১৬০ থেকে ১৮০ ও এলাচ ১৭০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।