উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চীনের প্রভাব খর্ব করতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন নতুন এক পরিকল্পনা করেছেন। কংগ্রেসের কাছে শিগগিরই তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরও ঋণ দেওয়ার আবেদন করবেন। সে লক্ষ্যে তিনি যে লিখিত বক্তৃতার খসড়া প্রস্তুত করেছেন, তার একটি কপি সিএনএনের হাতে এসেছে।
ইয়েলেন মনে করেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কর্মসূচিতে অর্থ না দিয়ে ইন্টার আমেরিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। কংগ্রেসের সদস্যদের তিনি এ কথাই বলবেন যে বাইডেন প্রশাসন এসব খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে চায়।
মঙ্গলবার হাউস ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস কমিটির কাছে সাক্ষ্য দেবেন জেনেট ইয়েলেন। তিনি সেখানে বলতে চান, ‘ভূরাজনৈতিক এ প্রতিযোগিতার সময় এসব অঞ্চলে আমাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন।’
তবে জেনেট ইয়েলেন মনে করেন, আইএমএফকে ঋণ দেওয়া হলেও তা চীনের অস্বচ্ছ ও অটেকসই ঋণের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০০৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ২২টি দেশকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ২৪০ বিলিয়ন বা ২৪ হাজার কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে চীন। এসব দেশ মূলত চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক অবকাঠামো প্রকল্পের কারণে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল, যেমন আর্জেন্টিনা, পাকিস্তান, কেনিয়া, তুরস্ক ইত্যাদি।
যেসব দেশ এই ঋণ নিয়েছিল, তাদের অনেকেই এখন তা পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। এতে এসব দেশের মানুষ আরও গভীর দারিদ্র্যের কবলে পড়তে পারে। এখন চীন আবার এসব দেশের অর্থনীতিকে বেইল আউট করার জন্য বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফকে আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু এ ঋণের মেয়াদ ও অন্যান্য শর্তের বিষয়ে এখনো স্পষ্ট অবস্থান নেয়নি।
চলতি বছর ইয়েলেন চীনের তৎপরতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, চীন যে দেশকে ঋণ দিচ্ছে, তারা ঋণের ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে এবং এ ঋণে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় না।
তখন ইয়েলেন আরও বলেছিলেন, ‘আমরা যেসব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের অন্তর্গত, সেসব প্রতিষ্ঠানে চীনের প্রভাব খর্ব করতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা শেষ পর্যন্ত যে জাতীয় ঋণের সীমা বাড়াতে রাজি হয়েছেন, তাতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন জেনেট ইয়েলেন। এতে খেলাপি হওয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র রক্ষা পেলেও রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে তার খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল।