বিশ্বে যখন ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে, ঠিক সে সময়ে বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ, বিশেষ করে চীন পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার আরও সমৃদ্ধ করছে। পাশাপাশি ক্ষমতাধর দেশগুলো তাদের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার আরও আধুনিক করছে। গতকাল সোমবার একদল গবেষক এমন দাবি করেন।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) এই গবেষণা চালায়। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ড্যান স্মিথ বলেন, বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাসের দীর্ঘদিনের যে প্রবণতা, তা মনে হচ্ছে শেষ হয়ে যাচ্ছে বা ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে।
এসআইপিআরআইয়ের তথ্যমতে, পারমাণবিক শক্তিধর নয়টি রাষ্ট্র যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স, ভারত, ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তান, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের শুরুর দিকে আগের বছরের তুলনায় পারমাণবিক ওয়্যারহেডের পরিমাণ কমেছিল। এবার অস্ত্রের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৫১২, যা গত বছরের শুরুতে ছিল ১২ হাজার ৭১০। এগুলোর মধ্যে ৯ হাজার ৫৭৬টি ‘সম্ভাব্য ব্যবহারের লক্ষ্যে সামরিক বাহিরীর হাতে মজুত’ আছে। ১ বছর আগের তুলনায় এ সংখ্যা ৮৬টি বেশি।
এসআইপিআরআই পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর হাতে থাকা মোট অস্ত্র (এর মধ্যে পুরোনো অস্ত্র আছে, যা নিষ্ক্রিয় করে ফেলা হবে) এবং ব্যবহার করার উপযোগী অস্ত্রের মজুতের মধ্যে তুলনা করেছে।
স্মিথ বলেন, ১৯৮০–এর দশকে এ ধরনের অস্ত্রের পরিমাণ ৭০ হাজারের বেশি ছিল। এখন সেই তুলনায় পারমাণবিক অস্ত্র অনেক কম উল্লেখ করে স্মিথ বলেন, মজুত অস্ত্রের মধ্যে ব্যবহারযোগ্য পারমাণবিক ওয়্যারহেড রয়েছে এবং এগুলোর সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে চীনে বেশি বেড়েছে। গত বছরও তাদের উৎপাদন বেড়েছে। তাদের কাছে এখন পারমাণবিক ওয়্যারহেড ৩৫ থেকে বেড়ে ৪১০ হয়েছে।
ভারত, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়াও তাদের মজুত বাড়াচ্ছে। আর রাশিয়া এই তিন দেশের তুলনায় অল্পসংখ্যক বাড়িয়েছে। তাদের এই অস্ত্রের সংখ্যা আগের তুলনায় ১২টি বেড়ে এখন ৪ হাজার ৪৮৯টি হয়েছে। পারমাণবিক ক্ষমতাধর অন্যান্য দেশ তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের পরিমাণ আগের মতোই ধরে রেখেছে।
বিশ্বের মোট পারমাণবিক অস্ত্রের প্রায় ৯০ শতাংশই আছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের হাতে।
স্মিথ বলেন, এ গবেষণায় বড় যে বিষয় বেরিয়ে এসেছে, তা হলো গত ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে পারমাণবিক অস্ত্রের পরিমাণ কমে আসতে দেখা গেছে। এখন সেই ধারার অবসান হতে চলেছে।
এসআইপিআরআইয়ের গবেষকেরা বলছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও নিরস্ত্রীকরণের কূটনৈতিক চেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে। যেমন ইউক্রেনে আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে ‘দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত স্থিতিশীলতা সংলাপ’ স্থগিত করেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে মস্কো পারমাণবিক অস্ত্রের তথ্যবিনিময়সংক্রান্ত কৌশলগত নিউ স্ট্যার্ট চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেয়। ২০১০ সালে ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর এই চুক্তি হয়েছে।
স্মিথ বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্রের মজুত বৃদ্ধির বিষয়টি ইউক্রেনের যুদ্ধের সঙ্গে মেলানো যাবে না। কারণ, নতুন যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করতে আরও বেশি সময় লাগে। আর যেসব দেশে এ ধরনের অস্ত্রের পরিমাণ বেড়েছে, সেসব দেশের বেশির ভাগের ওপরই এই যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব পড়েনি।
চীন অর্থনীতির পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর সব ক্ষেত্রে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। এর ফলে দেশটির প্রভাব বাড়ছে। স্মিথ বলেন, ‘চীন বিশ্বশক্তি হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে, এটাই আমাদের সময়ের বাস্তবতা।’