সিলেটে কাজে গিয়ে দুর্ঘটনায় ১৪ জনের প্রাণহানি, সুনামগঞ্জে গ্রামজুড়ে মাতম

সিলেটে কাজে গিয়ে দুর্ঘটনায় ১৪ জনের প্রাণহানি, সুনামগঞ্জে গ্রামজুড়ে মাতম

কাজের সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে সিলেটে গিয়েছিলেন তাঁরা। কেউ গিয়েছিলেন একা, কেউবা পরিবার নিয়ে। যাঁদের আয়ে পরিবার চলত, সেই কর্মক্ষম মানুষটি গ্রামে ফিরছে লাশ হয়ে। এক বা দুজন নয়, একই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৪ জন। তাঁদেরই ছয়জন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে ওই গ্রামের ঘরে ঘরে মাতম চলছে। এ ছাড়া পাশের গছিয়া, কাইমা আলীনগর গ্রামের আরও তিনজন মারা যান।

আজ বুধবার ভোরে সিলেটের আম্বরখানা থেকে ৩০ শ্রমিক ঢালাই কাজের জন্য পিকআপ ভ্যানে করে ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজারে যাচ্ছিলেন। পথে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজারে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে দুর্ঘটনায় পড়েন তাঁরা। এতে ১৪ জন নিহত ও ১০ জন আহত হন।

নিহত ১৪ জনের মধ্যে ১২ জনই সুনামগঞ্জের বাসিন্দা। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ৯ জন ও শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ৩ জনের বাড়ি। বাকি দুজনের একজন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট ও অন্যজনের বাড়ি নেত্রকোনায়।

দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামের মারা যাওয়া ছয়জনের সবাই শ্রমিক। তাঁরা সিলেটে থেকে ঢালাইয়ের কাজের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। এখন হাওর এলাকায় কোনো কাজ না থাকায় সিলেটে গিয়েছিলেন তাঁরা।

ভাটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শাহ আলম (৪০) বলেন, ‘তাঁরা সবাই শ্রমিক, দরিদ্র মানুষ। পেটের দায়ে অনেকেই গ্রাম ছেড়েছেন। যাঁরা মারা গেছেন, তাঁরাই সংসার চালাতেন। এখন প্রতিটি পরিবার চরম অসহায়। এসব পরিবারে আর কাজ করার লোকই নাই। দিন আনে দিন খায় অবস্থা সবার।’

একই গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য মহিবুর রহমান বলেন, তাঁর ভগ্নিপতি হারেছ মিয়া (৫৫) দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। একমাত্র ছেলে মিজানুর (১৯) গুরুতর আহত। দুই ভাগনি লেখাপড়া করে। তিন বছর ধরে সিলেটের কাজীটুলায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে তাঁরা থাকতেন। এখন হারেছ মিয়া মারা যাওয়ায় পুরো পরিবার অথই সাগরে পড়ল।

গ্রামের বাসিন্দা মেহের আলীর (২৬) স্ত্রী, চার বছরের এক ছেলে ও আড়াই বছরের এক মেয়ে আছে। মেহের আলীর মা, বাবা, ভাইবোন—কেউ নেই। মেহের আলী সিলেটে কাজে গিয়েছিলেন। দুর্ঘটনায় তিনিও মারা যান। এখন স্ত্রী নুরনেছা বেগম দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে কীভাবে বাঁচবেন, সেই দুশ্চিন্তায় বিলাপ করছেন। প্রতিবেশী মুমিনা বেগম বলেন, ‘সকাল থেকে ঘরে ঘরে বিলাপ চলছে। খাওয়া-দাওয়া নাই। মানুষজনকে সান্ত্বনা দেওয়ার উপায় নাই।’ গ্রামের আরেক বাসিন্দা জামাল মিয়া বলেন, ‘গ্রামের মানুষ হতভম্ব হয়ে গেছে। সবাই কাঁদছে। আমার ৬০ বছর বয়সে এমন ঘটনা আগে দেখিনি।’

নূর আলী নামের আরেকজন বলেন, ‘মানুষগুলা বাঁচার লাগি গ্রাম ছাইড়া শহরে গেছিল। অখন লাশ অইয়া আইতাছে। সবই নিয়তি। অখন ঘরের অন্যরা বাঁচব কিলা, ইটাই বড় চিন্তার বিষয়। সরকারে তারারে সাহায্য করতে অইব।’

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS