চার মাসের শান্ত অবস্থা ভেঙে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সীমান্ত। রোববার থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে দুদিনে দুই দেশের অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ছয়জন কম্বোডিয়ার নাগরিক এবং একজন থাই সেনাসদস্য।
কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে সীমান্ত এলাকায় থাই বাহিনীর ছোড়া গোলায় দুই বেসামরিক নিহত হন। এতে দুদিনে কম্বোডিয়ায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ছয়ে। থাইল্যান্ডে নিহত হওয়া ব্যক্তি দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্য।
বেসামরিকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বলেন, সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের নাটক সাজিয়ে থাইল্যান্ড সাধারণ গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে দেওয়া এক বিবৃতিতে থাই নৌবাহিনী জানায়, ত্রাত প্রদেশের জলসীমায় কম্বোডীয় সেনাদের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের ধাওয়া দেওয়া হয়। এরপর তারা সরে যেতে বাধ্য হয়। থাইল্যান্ড আরও অভিযোগ করেছে, কম্বোডিয়া স্থল ও জল সীমান্তে ভারী অস্ত্র, স্নাইপার এবং পরিখা খনন করে অবস্থান দৃঢ় করছে, যা থাই সার্বভৌমত্বের জন্য ‘গুরুতর হুমকি’।
এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল বা পান্না ত্রিভুজ থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সীমান্তসংশ্লিষ্ট অঞ্চলটি নিয়ে ১১৮ বছর ধরে চলমান বিরোধ নতুন করে দুই দেশের উত্তেজনার কেন্দ্রে। প্রাচীন মন্দির ও ঐতিহাসিক স্থাপনা–সমৃদ্ধ এই অঞ্চল দাবি করে উভয় দেশই।
১৯০৭ সালে ফরাসি উপনিবেশিক প্রশাসন কম্বোডিয়ার মানচিত্রে এলাকাটি অন্তর্ভুক্ত করলে থাইল্যান্ড এর বিরোধিতা করে। ১৯৫৩ সালে স্বাধীনতার পরও কম্বোডিয়া ভূখণ্ডটি নিয়ন্ত্রণে রাখে, আর দুই দেশের সম্পর্ক রয়ে যায় উত্তপ্ত।
দীর্ঘ সংঘাতের পর ১৫ বছর আগে দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে যায়। কিন্তু গত বছর মে থেকে ফের উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় গত জুলাইয়ে পাঁচ দিনের সংঘাতে নিহত হয় দুই দেশের ৪৮ জন নাগরিক, বাস্তুচ্যুত হয় ৩ লাখ মানুষ। পরে যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়।
রোববার থাইল্যান্ড জাতিসংঘে অভিযোগ জানায় যে, কম্বোডিয়া গোপনে থাই ভূখণ্ডে ল্যান্ডমাইন পেতেছে যাতে থাই ও চীনা নাগরিক আহত হন। তদন্তে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপও চায় দেশটি।
এর কয়েক ঘণ্টা পর স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে সি সা কেত প্রদেশের সীমান্তে গুলি ছোড়ে কম্বোডীয় সেনারা। এতে আহত হন দুই থাই সেনা। পাল্টা হিসেবে কম্বোডিয়ার ভেতরে বিমান হামলা চালায় থাই বাহিনী, এর পরই শুরু হয় পূর্ণাঙ্গ সংঘাত।