বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে ৮ দলের নেতারা যা বললেন

বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে ৮ দলের নেতারা যা বললেন

জুলাই জাতীয় সনদ সফল বাস্তবায়ন ও জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনসহ ৫ দফা দাবিতে বরিশালে ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টিসহ আন্দোলনরত ৮ দল বরিশালের উদ্যোগে নগরের ঐতিহাসিক বেলস্ পার্ক মাঠে এ বিভাগীয় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। 

সমাবেশে প্রধান অতিথিসহ অতিথিদের বক্তব্যের চৌম্বক অংশ তুলে ধরা হলো, সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চরমোনাই পীর বলেন, ক্ষমতা লোভী দলকে বলতে চাই, ইতিহাস যদি না বোঝেন, জনতার কথা যদি না বোঝেন, তাহলে আপনাদেরও মানুষ বাংলার জমিন থেকে উৎখাত করে ছাড়বে এটাও বুঝবেন। যারা ক্ষমতা প্রেমিক রয়েছেন, তাদের বলতে চাই, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। চাঁদাবাজ, খুনি-দেশে অশান্তি করবে, তাদের জন্য রাস্তায় নামিনি।

তিনি বলেন, চাঁদাবাজি, মানুষ খুন এসব দেখার জন্য রাস্তার নামিনি। ৫৩ বছরে এ-দল ও-দল সকল দল দেখেছি, কিন্তু কেউ ইসলামী আইন বাস্তবায়নের কথা বলেনি। সংসদে আমরা যেতে পারলে কোনো মায়ের কোল খালি হবে না, চাঁদাবাজ গুন্ডা থাকবেন। অবিচার থাকবে না, দেশের উন্নতি লাভ করবে। খুনি, চাঁদাবাজ, টাকা পাচারকারী, যারা বিদেশের তাঁবেদারি প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাদের জায়গা এ দেশে হবে না।

সভাপতির বক্তব্যে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েব আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আমরা অনেকে আগে পীর পছন্দ করতাম না। আমিও ছাত্রজীবনে এমনটা মনে করতাম। কিন্তু আজকে চরমোনাই পীর সাহেবের পাশে বসে মনে হলো, তিনি শুধু পীর নন, তিনি এ দেশের ইসলাম প্রতিষ্ঠার একজন মহাবীর।

তিনি বলেন, আমরা আটদল ঐক্যবদ্ধ হয়েছি ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে দুইটা দলের কথা বলেছেন। একটা হলো হিজবুল্লাহ আরেকটা হিজবুশ শয়তান। সুতরাং আমরা আল্লাহর দলে থাকতে চাই। আসুন আমরা একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোরআনের আইন চালু করি। আমরা মানবরচিত আইনের সংবিধান দেখতে চাই না। মদিনার ইসলাম কায়েম করতে চাই। সংস্কারের মাধ্যমে আমরা সংবিধান থেকে ইসলামবিরোধী ধারা বাতিল করতে চাই।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, একটি দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু তাদের যারা সহযোগিতা করেছে তাদেরও নিষিদ্ধ করতে হবে। সবশেষে তিনি ৮ দলকে আগামীতে ভোট দিয়ে বিজয়ী করার আহ্বান জানান।
কেউ যদি বলেন, ক্ষমতায় গিয়ে পতিত স্বৈরাচারের মামলা তুলে নেওয়া হবে, তাহলে কি জুলাই বিপ্লবের প্রতি বিশ্বাস ঘাতকতা করা হবে না বলে জনতার প্রতি জানতে চেয়ে তিনি বলেন, কোরআনের আইন কায়েমের জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো। তাহলেই দেশে শান্তি ফিরে আসবে। 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, বাংলাদেশে ইসলামী হুকুমত কায়েম হলে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে। কেউ খাবে তো কেউ খাবে না তা হবে না ইনশাল্লাহ। ইসলামী হুকুমত হলে এ দেশে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই স্বাধীনভাবে বসবাস, ব্যবসায় বাণিজ্য ও ধর্মীয় আচার পালন করবে। 

তিনি বলেন, ইসলামী হুকুমত হলে দেশের সবাই একসাথে হাসবো এবং কাঁদবো, যদি খেয়ে থাকি তবে একসাথে খাবো, না খেয়ে থাকলে সবাই একসাথে না খেয়ে থাকবো। আজকের এ সমাবেশ দেখে কেবল জালিম ও চাঁদাবাজরাই নাখোশ হতে পারে, মুক্তিকামী মানুষ আশার আলো দেখবে ইনশাল্লাহ।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আজকের এই সমাবেশের মাধ্যমে বরিশালবাসী জানিয়ে দিল দক্ষিণাঞ্চল আলেম ওলামাদের ঘাঁটি, ইসলামপন্থিদের ঘাঁটি। এখানকার প্রতিটি আসন থেকে ইসলামপন্থিরা বিজয়ী হবে। এবারের ভোট হবে চাঁদাবাজ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, এবারের ভোট হবে আলেম ওলামাদের হত্যার প্রতিবাদে। যারা ভোটকেন্দ্র দখল করে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চিন্তা করছেন, তাদের স্পষ্ট ভাষায় বলি, কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র করলে ভোটের দিন হবে ৫ আগস্ট।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আর কোনো চাঁদাবাজ, দখলবাজ শক্তিকে দেখতে চায় না। মানুষ ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখেছে, সোনার বাংলা দেখেছে, বহু বাংলা দেখে এখন জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ইসলামের বাংলাদেশ দেখার জন্য।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেন, যুদ্ধ শেষ হয়নি, তবে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার আগে কেউ ঘরে ফিরে যাবেন না। নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার, এই বিজয় ধ্বনি ওই হিন্দুস্থানে পৌঁছে গিয়েছে। ওই নতুন জালেম বিএনপির বুকে কাঁপুনি ধরিয়েছে, জয় আমাদের সুনিশ্চিত। 

দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল চারটা পর্যন্ত চলমান সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়াজ্জিন হোসাইন হেলাল, খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল বাসির আজাদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম আনোয়ারুল ইসলাম চান বক্তব্য রাখেন।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS