স্মার্টফোন ছাড়া খেতে চায় না খুদে, জানুন করণীয়

স্মার্টফোন ছাড়া খেতে চায় না খুদে, জানুন করণীয়

চার বছরের টিয়া (ছদ্মনাম)। কোনো কিছু খাওয়াতে গেলে টিয়ার বায়নাক্কা প্রচুর। তাকে খাওয়ানোর নামে যুদ্ধ চলে বলে তার মায়ের অভিযোগ। তবে টিয়ার মতো বেশিরভাগ শিশুকে স্মার্টফোন দিলে কিছুটা তো খায়। শিশুদের স্মার্টফোনের প্রতি এই আসক্তি নিয়েই চিন্তিত চিকিৎসক থেকে মনোবিদ, মনোরোগ চিকিৎসকরা। গান, কার্টুন, রিল চললেই তারা খাবে। আর বিনোদন বন্ধ হলেই চিৎকার, চেঁচামেচি, কান্না, বায়না।

পেরেন্টিং কনসালট্যন্ট থেকে মনোবিদদের প্রশ্ন, এভাবে কি শিশু আদৌ খেতে শেখে? না কি তাকে খাইয়ে দেওয়ার কথা? মনো-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপ বলছেন, এভাবে না কোন শিশু খাবারের স্বাদ বোঝে, না তার পুষ্টিগুণ জানে। অভিভাবকরা কার্যত স্মার্টফোন দেখিয়ে তাদের খাবারটি গলাধঃকরণ করান।

সমস্যা কোথায়?

শিশুর খেতে না চাওয়ার পেছনে থাকতে পারে খিদে না থাকা, শারীরিক অসুস্থতা, খাবারটি খেতে ভালো না লাগা। কখনও জোর করে খাওয়ানোর বিরুদ্ধেও সে প্রতিরোধ করতে চায় খাবার দীর্ঘক্ষণ মুখে রেখে, না চিবিয়ে।

অভিভাবকরা অনেক সময় নির্দিষ্ট পরিমাপের খাবার সন্তানকে খাওয়াতে চান। তার চেয়ে কম খেলে কোনো কোনো মায়ের হয়তো মনে হয়, খাওয়া কম হচ্ছে। পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে। মোবাইল দেখিয়ে যে পরিমাণ খাবার খাওয়ানো যায়, এমনিতে তা সম্ভব হয় না।

সন্তানের সঙ্গে গল্প করে, কথা বলে খাওয়াতে অনেক সময় লাগে। তাড়াহুড়োর সময় স্মার্টফোন পছন্দের গান, কার্টুন চালিয়ে দিলে দুই ঘণ্টার কাজ আধ ঘণ্টায় মিটতে পারে। 
মনোবিদরা জানাচ্ছেন, সমস্যা হলো, স্মার্টফোন দেখতে দেখতে শিশু যখন খায়, সে অন্য কোনো বিষয়ে মগ্ন হয়ে থাকে। ফলে কি খাচ্ছে, কতটা খাচ্ছে খেয়ালই থাকে না। অনেক সময় শিশু খেয়ে নিচ্ছে বলেই অভিভাবকরা খাইয়ে যান। এতে অভিভাবকদের সুবিধা হলে, তা থেকে স্থূলত্বের মতো সমস্যা হয়। 

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বজুড়ে শিশুদের স্থূলত্বের সমস্যা চরম আকার ধারণ করছে। 

সচেতনভাবে খেলে তবেই কিন্তু শিশু বুঝবে তার পেট ভরল কি না। খাওয়া বেশি হলে, সে নিজে থেকেই হাত সরিয়ে দেবে। সেই ইঙ্গিত যদি অভিভাবকরা অবহেলা করেন, সমস্যা হবে তখনই, বলছেন মোহিত।

বাস্তবসম্মত সমাধানের পথ কি?

শিশুদের স্ক্রিন টাইম বেঁধে দেওয়া দরকার। খাওয়ার সময়ে স্মার্টফোন দেওয়া যাবে না। এমন পরামর্শই মেলে। তবে কোনো কোনো মায়ের যুক্তি এসব তত্ত্বকথা। বাস্তবে মানা বেশ কঠিন।

মোহিত বলছেন, একটু বেশি খাওয়ানোর চেয়ে স্মার্টফোনে আসক্তি কতটা ক্ষতিকর অভিভাবকরা সচেতন হলে, তারাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কোনোটা করণীয়।

মনো-সমাজকর্মীর পরামর্শ—

খাওয়ানোর সময় স্মার্টফোন দেওয়া, টিভি দেখিয়ে খাওয়ানো সমাধান নয়। বরং সে যদি খুব কমও খায়, সেটুকু মেনে নেওয়া দরকার।

শিশুর অন্যায্য বায়নায় মদত দিলে, ভবিষ্যতে তা তার জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে। চিকিৎসকরা বলেন, খিদে পেলে সে নিজে খাবে। তার খিদে পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা জরুরি। বুঝতে হবে, তার খেতে না চাওয়ার কারণ কী।

স্বাদ এবং খাবারের বৈচিত্র খুব জরুরি। শিশুরা রংচঙে জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হয়। অমলেট থেকে ভাত, রুটি— যেটাই দেওয়া হোক না কেন, রান্নায় ভাবনা দরকার। ডিমের পোচও গাজর, আঙুর দিয়ে চোখ-নাক তৈরি করে সাজানো যায়। পালংশাক, ধনেপাতা বা শাক দিয়ে ছোট সবুজ রুটি করা যায়। একইসঙ্গে জরুরি স্বাদও।

রান্না করার সময় খুদেকে সঙ্গে রাখতে পারেন। কি রান্না হচ্ছে, কি করে হচ্ছে, তাকে দেখালে সে-ও কিন্তু কৌতূহলী হবে। রান্না করা খাবারের স্বাদ পাওয়ার আগ্রহ তৈরি করা যায় এভাবেও।

মাটির সবজি, বইয়ের পাতায় সবজির ছবি দেখিয়ে তাকে জিনিসটির প্রতি উৎসাহী করা যায়। সেই সবজির পুষ্টিগুণ তার মতো করে বুঝিয়ে সেটি রান্না করে দিলে, শিশু কৌতূহলী হতে পারে। একলা শিশুকে না খাইয়ে তার সঙ্গে যদি বড়রা খান, সেই খাবারটির প্রশংসা করেন, তা হলেও কাজ হতে পারে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023 EU BANGLA NEWS