রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে গত মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অনেক পরিবার নিজেদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, শিক্ষার্থীদের বই-খাতা, ব্যবসার মালামাল সবকিছু হারিয়েছে। তাদের অনেকে এখনো খোলা আকাশের নিচে অসহায় অবস্থায় দিন যাপন করছে। এমন কয়েক হাজার নারী- শিশু-বৃদ্ধের বেদনার্ত চাহনি যেন অন্যদেরও আক্ষেপে পোড়াচ্ছে।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) ঘটনাস্থলে ঘুরে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১৫শ’ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। হঠাৎ রাতের আঁধারে লাগা আগুন মুহূর্তের মধ্যে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের বেশ কিছু ইউনিট ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করলেও বাঁচানো যায়নি হাজারো মানুষের শেষ সম্বল।
কড়াইল বস্তির মো. কবির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমার এখানে ১০টা ঘর আছে। আমি এখানে থাকি না, সব ভাড়াটিয়ারা থাকে। তাদের ঘরসহ সংসারের জিনিসপাতি সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুন ধরার পর সবাই এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে বের হয়ে গিয়েছিল। ফিরে এসে দেখে শুধু ছাই ছাড়া আর কিছুই নেই। এর আগেও দু-একবার এভাবে আগুন লাগে। এখানে রাস্তাটা খুব ছোট, তার জন্য ফায়ারের গাড়ি ঢুকতে পারে না। এবার সবাই মিলে রাস্তাটা বড় করার জন্য চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

ক্ষতিগ্রস্ত নারী মোসাম্মৎ লালিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে বলেন, আমার স্বামী রিকশা চালান। অসুস্থ মানুষ। একটা মেয়ে ক্লাস টেনে পড়ে, বাসার পাশে স্কুল। তাই এদিক থেকে বাসা অন্য দিকে নিতে পারি না। এদিকে বাসাভাড়াও কিছুটা কম, তাই এই বস্তিতে থাকি, কিন্তু এবার আগুনে একটা লাল সুতাও বাঁচাতে পারিনি। শুধু মেয়েটা নিয়ে পাশের স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলাম। পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই নাই।
“সব আগুনে শেষ হয়ে গেল… বাচ্চাদের জন্য একটা কাপড়ও বাঁচাতে পারলাম না”, বলেন লালিয়া।
আগুনের পর কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ও খাবারের ব্যবস্থা করছে। ত্রাণ কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও।
ভুক্তভোগীরা জানান, মানবিক সহায়তার জন্য এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শীতের কাপড় ও বাচ্চাদের খাবার। দরকার শুকনো খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা।