পুরান ঢাকার আরমানিটোলার কেপি ঘোষ স্ট্রিট স্থানীয়দের কাছে পরিচিত কসাইটুলি হিসেবে। সংকীর্ণ এই সড়কের বাংলা স্কুলের সামনে ২০ নং ভবনের নিচে রয়েছে গরু ও খাসির মাংস বিক্রির দোকান। নয়ন আহমেদ পরিচালিত এই দোকান সুলভ মূল্যে মাংস বিক্রির জন্য ব্যাপক পরিচিত। প্রতিদিন স্থানীয়রাসহ অসংখ্য মানুষ এই দোকানে মাংস কিনতে ভিড় জমান। ছুটির দিনে সেই ভিড় কয়েকগুণ বাড়ে।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকে ভিড় লেগে ছিল ওই মাংসের দোকানে। দোকানের সামনে সংকীর্ণ রাস্তায় পথচারীদেরও ছিল ব্যাপক আনাগোনা। কিন্তু সকালে আকস্মিক ভূমিকম্পে জরাজীর্ণ সাত তলা ভবনটির ওপর থেকে ভেঙে পড়ে রেলিং। ঘটনাস্থলেই মারা যান একজন। গুরুতর আহত আরও ১২ জনকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হলে আরও দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টাফ অফিসার মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, আরমানিটোলার কসাইটুলি এলাকার একটি ভবনের পাশের দেয়াল এবং কার্নিশ থেকে ইট ও পলেস্তরা খসে নিচে পড়ে, যেখানে একটি গরুর মাংস বিক্রির দোকান ছিল। এতে সেখানে থাকা ক্রেতা ও পথচারীরা আহত হন। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই স্থানীয় লোকজন তাদের হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় আরও ১০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এই ঘটনায় হতবিহম্বল হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। একদিকে তীব্র ভূমিকম্পের অনুভূতি, অন্যদিকে রেলিং পড়ে হতহতের ঘটনায় তারা অনেকটাই বাকরুদ্ধ।
নয়ন আহমেদের ‘বিসমিল্লাহ গরু-খাসি মাংস সাপ্লাই’ দোকানের ঠিক সামনেই রয়েছে স্বপন সেলুন। এই সেলুনে কাজ করা সূর্য দাস বাংলানিউজকে বলেন, সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দোকানে আসছিলাম। যখন নয়াবাজার ছিলাম তখন ভূমিকম্প হয়। তারপর দোকানে এসে দেখি, কয়েকজনকে রিকশা-ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কারও মাথা ফেটে গেছে, কেউ শরীরে আঘাত পেয়েছেন। চারজন গুরুতর আহত ছিলেন। এর মধ্যে একজনকে রিকশায় এবং তিনজনকে ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শুনেছি তাদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাশের একটি লন্ড্রি দোকানের মালিক বলেন, আমি আমার দোকানের ভেতর ছিলাম। ভূমিকম্প শুরু হওয়ার পরপর ভারী কিছু পড়ার শব্দ হয়। সঙ্গে সঙ্গে দোকান থেকে বের হয়ে দেখি, মাংসের দোকানের সামনে ইট, বাঁশ, ত্রিপল পড়ে আছে। কয়েকজন আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে সবাই মিলে তাদের ভ্যানে করে হাসপাতালে পাঠাই।
স্থানীয়দের ভাষ্য, মাংসের দোকানের সামনে বাঁশ দিয়ে ত্রিপল টাঙানো ছিল। যে কারণে হতাহতের সংখ্যা কম হয়েছে। ওপর থেকে রেলিংটি প্রথমে ওই ত্রিপলের ওপর পড়ে। তারপর পড়ে লোকজনের ওপর।
কসাইটুলির পাশেরই রূপান্তর টাওয়ারে থাকেন দেলোয়ার হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নয়নের মাংসের দোকানে সব সময়ই ভিড় থাকে। শুক্রবার সেই ভিড় অনেকগুণ বেশি হয়। স্থানীয়দের পাশাপাশি আশপাশের এলাকা থেকেও মানুষ এখানে মাংস কিনতে আসে। আজও তেমন ভিড় ছিল। রাস্তায়ও মানুষ ছিল। ভবনের ওপর থেকে রেলিং ভেঙে মাংসের দোকানের সামনের টাঙানো ত্রিপলের ওপর পড়ে। তারপর মানুষের ওপর পড়ে। ত্রিপল না থাকলে আরও অনেকে প্রাণহানি ঘটতে পারতো।
তিনি আরও বলেন, আমি খবর শুনে এসে দেখি, রাস্তার ওপর মানুষ পড়ে আছে। এক নারী, দুইজন বয়স্ক মানুষ ও এক শিশু গুরুতর আহত হয়। দৃশ্যটা খুবই বীভৎস্য ছিল। ইট পড়ে একজনের মাথার মগজ বের হয়ে গেছে।