টেলিযোগাযোগ খাতে নিরাপত্তা জোরদার ও অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেটের ব্যবহার বন্ধ করতে সরকার ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) সিস্টেম চালু করার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই দেশের মোবাইলের বাজারে চরম অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
বিশেষ করে ‘আনঅফিসিয়াল’ বা নিবন্ধনহীন ফোনের বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ ব্যবসায় জড়িত লক্ষাধিক ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা উদ্বিগ্ন। সরকারের এই নতুন সিদ্ধান্ত আগামী ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে কার্যকর হবে। ইতোমধ্যে মার্কেটগুলোয় আনঅফিসিয়াল ফোন বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সরেজমিনে রাজধানীর ইস্টার্ন প্লাস, মোতালেব প্লাজাসহ স্থানীয় বিভিন্ন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
আলতাফ হোসেন নামে এক মোবাইল ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের ঘোষণায় ব্যবসায়ীদের ‘করুণ পরিস্থিতি’ ও ‘পথে বসার দশা’ হয়েছে। ১৫ দিন ধরে ফোন বিক্রি প্রায় নেই বললেই চলে। যদি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়, তবে প্রায় ২০ লাখ মোবাইল ব্যবসায়ী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমাদের অনেক ব্যবসায়ীর ব্যাংক লোন আছে, অনেকের মার্কেটে ডিও আছে। এই ঘোষণা বাস্তবায়ন হলে আমরা পথে বসবো। সরকারের উচিত এই ব্যবসায়ীদের কথা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা।
এদিকে, স্মার্টফোন ও গ্যাজেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের (এমবিসিবি) পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এনইআইআর বাস্তবায়নে তারা বাধা হতে চান না, তবে হাতে থাকা হ্যান্ডসেট বিক্রির জন্য এক বছর সময় চেয়েছেন।
সরকারের এই পদক্ষেপে ক্রেতাদের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে নিরাপত্তা ও বৈধতার পক্ষে মত দিলেও, দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেকেই চিন্তিত। মগবাজারের বাসিন্দা নোমান সাকির নিশু মোবাইল কিনতে এসে দ্বিধায় পড়েছেন। তিনি একটি জনপ্রিয় মডেলের আনঅফিসিয়াল ফোন ১ লাখ ৭ হাজার টাকায় কেনার চিন্তা করছিলেন। কিন্তু একই ফোন অফিসিয়াল দামে কিনতে গেলে লাগবে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
নোমান সাকির নিশু বাংলানিউজকে বলেন, এত দাম দিয়ে অফিসিয়াল ফোন কেনা সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন। এই সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের পকেটে চাপ বাড়াবে।
মোতালেব প্লাজায় সার্ভিসিং করাতে আসা এক ক্রেতা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অফিসিয়াল ফোনের চেয়ে আনঅফিসিয়াল ফোনের বাজার অনেক বড় এবং এ খাতে ব্যবসায়ীর সংখ্যাও বেশি। তাই হঠাৎ করে সব বন্ধ না করে সরকারের উচিত সকল ব্যবসায়ীর সঙ্গে বসে একটি নিয়মের মধ্যে এনে তাদের ব্যবসা করার সুযোগ তৈরি করা। এতে করে বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে এই খাতকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।