জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ভারত তার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে। এজন্য মোদীর সরকারের প্রতি তিনি চিরকৃতজ্ঞ।
ভারতের এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি এনডিটিভিও প্রকাশ করেছে।
জয় বলেন, ‘…ভারত সবসময়ই আমাদের ভালো বন্ধু। সংকটের সময় ভারত মূলত আমার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে।’
গণঅভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা হয়েছিল দাবি করে জয় আরও বলেন, ‘তাই আমার মায়ের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীর সরকারের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ…।’
গত বছরের জুলাইতে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। প্রথমে এই আন্দোলন ছিল একেবারেই শান্তিপূর্ণ। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তার ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে শিক্ষার্থীদের দমনে মাঠে নামালে সহিংসতা শুরু হয়। পাশাপাশি হাসিনার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের এক পর্যায়ে আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের এক দফা দাবিতে। তীব্র জনরোষের মুখে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের, শেখ হাসিনা পালিয়ে যান ভারতে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, জুলাই-আগস্টে অভ্যুত্থান চলাকালে এক হাজার চারশ’র বেশি মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো সামরিক অস্ত্র ও শটগানের গুলিতে মারা যান। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা গুরুতর আহত হন। পঙ্গু হন অনেকেই। অনেকের দুই চোখ, কারো কারো এক চোখ অন্ধ হয়ে গেছে।
ওই প্রতিবেদন অনুসারে, এই হত্যাকাণ্ডসহ দমন-পীড়নে সমন্বয়কের ভূমিকায় ছিলেন শেখ হাসিনা। এ বছরের জুলাইতে বিবিসিতে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। যেখানে শেখ হাসিনার কথোপকথনের একটি ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং থেকে জানা যায়, জুলাইয়ে আন্দোলন চলাকালে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি তিনি নিজেই দিয়েছিলেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সম্প্রতি শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি তার মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালেরও মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।
এএনআইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জয় দাবি করেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সময় বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি।
যদিও হাসিনা পলাতক থাকায় তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দেয় রাষ্ট্র। রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনই বিচার প্রক্রিয়া ‘স্বচ্ছ’ ছিল এবং তিনি ‘চাপহীন দায়িত্ব পালন করেছেন’ বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন।
মায়ের উল্টো সুর জয়ের মুখে
সম্প্রতি সিএনএন-নিউজ এইটিনকে ইমেইল মারফত দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাসিনা বলেন, তার সরকারের পতনের পেছনে আমেরিকা বা পশ্চিমা কোনো শক্তির সরাসরি ভূমিকা ছিল বলে তিনি মনে করেন না।
মায়ের সেই কথার উল্টো উচ্চারণ করেছেন জয়। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত হাসিনাপুত্র এএনআইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনকেই দোষারোপ করেন।
তিনি বলেন, ‘এ বছরের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেন যে আগের প্রশাসন ইউএসএআইডির মাধ্যমে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে কয়েক মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিল’।